নিহত স্কুলছাত্র মাহফুজুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় শোবার ঘরে ঢুকে মাহফুজুর রহমান ওরফে সাজিদ (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সে উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের মধ্য রহিমপুর গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে এবং শাহ নুরুন্নবী বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

নিহত মাহফুজুর রহমানের পরিবারের ভাষ্য, গতকাল শনিবার দিবাগত রাতের কোনো একসময়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে বাড়ির লোকজন ঘরে ঢুকে বিছানায় মাহফুজুরের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করতে থাকেন। পরে গ্রামের লোকজন থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত মাহফুজুরের বাড়ি নান্দাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৬-১৭ কিলোমিটার দূরে। পাশেই কিশোরগঞ্জ।

মাহফুজুর রহমানের চাচাতো বোন ও একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মোছা. সাবিকুন্নাহার জানায়, সকাল ১০টার দিকে সে মরিচ আনতে মাহফুজুরের ঘরে যায়। ঘরে গিয়ে দেখে, ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে এবং মশারির মধ্যে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে মাহফুজুর। তখন সে মাহফুজুরকে ডাক দেয়। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে লেপ সরিয়ে ছোট ভাইকে বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সে চিৎকার দেয়।

মাহফুজুরের চাচা আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, কে বা কারা, কী কারণে হত্যা করেছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। মাহফুজুরের মা ইয়াসমীন আক্তার বলেন, এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বড় ছেলে রবিউল আউয়ালকে নিয়ে বাবার বাড়ি সিংরইল ইউনিয়নের নগরকচুরি গ্রামে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে থাকা অবস্থায় ছোট ছেলে খুন হওয়ার ঘটনা জানতে পেরে সকালে বাড়ি ফিরে আসেন।

ইয়াসমীন আক্তার আরও বলেন, তাঁর স্বামী মাহাব উদ্দিন সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর স্বামীর রেখে যাওয়া জমিজমা আবাদ করে দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার চলছিল। সম্প্রতি তাঁর বড় ছেলে রবিউল আউয়ালকে (১৯) মুঠোফোনে ‘মুরগির মতো গলা কেটে হত্যা’ করার হুমকি দিতেন প্রতিবেশী মো. আলালের ছেলে আরমান ও তাঁর মামাতো ভাই পাশের টানসিদলা গ্রামের আবদুল হান্নান।

হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজুরের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আরমান ও হান্নান চক্রান্ত করে ফাঁদে ফেলে তাঁর সঙ্গে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এক নারীর জোর করে বিয়ে দেন। এ বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীকে ব্যবহার করে তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা। কিন্তু ২৩ মার্চ তিনি ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দেন। এ ঘটনায় দুজনের পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে যায়। এ ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাঁর ভাইকে খুন করা হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

আরমানের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, আরমান কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।