দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বছরের কোন সময়ে হবে এবং কমিটির মেয়াদ কত দিন, তা সমিতির গঠনতন্ত্রেই উল্লেখ আছে। কিন্তু নিজেদের তৈরি করা নিয়ম নিয়েই দ্বন্দ্ব বেধেছে সমিতির সদস্যদের মধ্যে। এর জেরে সম্প্রতি সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন তাঁরা।
৪ মার্চ দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির দুই পক্ষের সদস্যদের মধ্যে কয়েক দফায় ঘটা সংঘর্ষের কারণ জানতে চাইলে দুই পক্ষের নেতারা সমিতির গঠনতন্ত্রের একটি অনুচ্ছেদের কথা বলেছেন। এ দুই পক্ষ হলো বর্তমান ও সাবেক কমিটি। তারা অনুচ্ছেদের দুই রকম ব্যাখ্যাও দিয়েছে। আর সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন, অনুচ্ছেদ নিয়ে নেতারা দুই রকম ব্যাখ্যা দিলেও মূলত সমিতি থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসিকতাই শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে রূপ পেয়েছে।
দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের ৬৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অন্য কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত না হলে কার্যনির্বাহী কমিটি এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবে। নির্বাচন সাধারণত প্রতি বাংলা সনের চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহের শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।’
বাংলা চলতি সনের চৈত্র মাসের শেষ শনিবার আগামী ১০ এপ্রিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই দিন বাংলা ১৪২৮ সনের জন্য কমিটি গঠনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সাবেক কমিটির নেতারা চাইছেন, এদিনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু ১৪২৭ সনের জন্য যে কমিটি, তা করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের এপ্রিলে না হয়ে সেপ্টেম্বরে গঠন করা হয়েছিল। ফলে ১০ এপ্রিল নির্বাচন হলে বর্তমান কমিটির দায়িত্ব পালনের মেয়াদ সাত মাসের মাথায় শেষ হয়ে যাবে। এ কারণেই বর্তমান কমিটি দায়িত্ব ছাড়তে চাইছে না।
বর্তমান কমিটির সভাপতি মাজহারুল হক সরকার বলেন, তাঁরা কমিটির মেয়াদ এক বছর পূরণ করেই ক্ষমতা ছাড়তে চান। গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কমিটির মেয়াদ হবে এক বছর। সে অনুযায়ী তাঁদের কমিটির মেয়াদ আগামী এপ্রিলের পরও পাঁচ মাস বাকি থাকবে।
মাজহারুল হক বলেন, ‘আগের কমিটি যথাসময়ে নির্বাচন না দিয়ে প্রায় পাঁচ মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের পর নির্বাচন দেয়। সেখানে আমরা গঠনতন্ত্র মেনেই এক বছর ক্ষমতায় থাকতে চাইছি।’
এ বিষয়ে সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সরকার বলেন, তাঁদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ১৩ এপ্রিল। এরপরই তাঁরা নির্বাচন দিতে চেয়েছিলেন। সব প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু লকডাউন চলায় তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ামাত্রই তাঁরা নির্বাচন দিয়েছেন।
দ্বন্দ্বের কারণ ‘অনিয়ম’
বর্তমান কমিটির নেতারা বলেছেন, সাবেক কমিটির নেতারা নিজেদের অনিয়ম ঢাকতেই নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। সাবেক কমিটি দায়িত্ব পালনকালে আইনজীবী সমিতি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে। এটি তৃতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমান কমিটি ক্ষমতায় আসার পর ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দিনাজপুরের দুর্নীতি দমন কমিশনসহ কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়। বর্তমান কমিটির নেতাদের এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতেই সাবেক নেতারা দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বর্তমান কমিটি লিখিত যে অভিযোগ দিয়েছে সেখানে দেখা যায়, ভবন নির্মাণ ও বিভিন্ন আয়ের খাত পর্যালোচনা করে সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে বর্তমান কমিটি।
বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাবেক কমিটির ১৭ মাস মেয়াদকালের রেজিস্টার বই, ক্যাশ বই, লেজার বই, ওকালতনামা, জামিননামাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অডিট করে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সরকার বলেন, বর্তমান কমিটির অডিট রিপোর্ট একপেশে, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।