নির্বাচনী ফলাফলে অসন্তোষের জেরে ভাঙচুর, প্রার্থীসহ ২৮ জনের নামে মামলা

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের পক্ষ থেকে পরাজিত প্রার্থী এরশাদুজ্জামান মোল্লাসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। রাতেই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে বিরল থানা-পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন (২০) ও একই গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে মো. লিমন (২০)। আজ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ভোট গ্রহণ শেষে ইভিএম মেশিন ও ভোটের অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন। সেখানে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। তখন ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিজোড়া ইউপির মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃঙ্খলা করেন এবং উপজেলা পরিষদ ভবনে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। এতে ভবনের বৈদ্যুতিক বাতি ও জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় একজন পুলিশ সদস্যও জখম হন। উপজেলা কমপ্লেক্সে অনধিকার প্রবেশ, সরকারি কাজে বাধাদান ও বল প্রয়োগ করার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বুধবার অনুষ্ঠিত উপজেলার বিজোড়া ও পলাশবাড়ী ইউপি নির্বাচনে কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। বিজোড়া ইউপিতে তিনজন প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমজাদ হোসেন ৫ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এরশাদুজ্জামান মোল্লা পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২৫ ভোট। এ ছাড়া ঘোড়া প্রতীকে শহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৮১ ভোট। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময় ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে এরশাদুজ্জামানের সমর্থকেরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা উপজেলা পরিষদ ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন।

ভোটের ফলাফল ও ভাঙচুরের ঘটনায় এরশাদুজ্জামান মোল্লা দাবি করেন, ফলাফল ঘোষণার সময় দুই কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তিনি ১০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী ছিলেন। কর্মী-সমর্থকেরা উল্লাসও শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন, ১২৩ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এ খবরে নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। তবে ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনায় জড়িত সবাই তাঁর সমর্থক নন। তিনি অভিযোগ করেন, ধামাহার ভোটকেন্দ্রে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ২০২ ভোট আর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ৯৬ ভোট। সেই কেন্দ্রে ঘোড়া প্রতীকের ভোট নৌকার প্রতীকের ঘরে প্রিন্ট দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তিনি ভোট পুনঃগণনার আবেদন করবেন বলে জানান।

বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার বলেন, নির্বাচনে হেরে গিয়ে ওই প্রার্থীর সমর্থকেরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন এবং সরকারি জিনিসপত্র নষ্ট করেছেন। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্যকে জখম করাসহ প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।