নির্বাচনের আগে বহিষ্কার, বিজয়ী হওয়ায় ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ

ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় দল থেকে বহিষ্কার হন সাইফুল ইসলাম। তবে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে জয়ী হওয়ার পর তাঁর কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এ নিয়ে সমালোচনা করছেন দলের নেতারা।

গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলামকে পরাজিত করে জয়ী হন সাইফুল ইসলাম। তিনি আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৭০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। রাকিবুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ১ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হওয়ায় গত ১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে সাইফুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ও বহিষ্কৃত নেতা সাইফুল ইসলাম নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করেন। বিজয়ী হওয়ার খুশিতে তিনি জেলা নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। নেতারাও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে হাসিমুখে বরণ করেন। পরে নেতাদের সঙ্গে দেখা করা ও ফুলেল শুভেচ্ছার এসব ছবি তিনি ফেসবুকে দেন।

এ ঘটনার সমালোচনা করে শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আলী ইমাম গত রোববার ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘বহিষ্কার করেন, আবার সেই বহিষ্কৃত বিজয়ী জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা নেন। তাহলে বহিষ্কারের মূল্য কোথায় থাকল? কী রাজনীতি এটা?’

নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যে নেতাকে ভোটের আগে বহিষ্কার করা হলো, ভোটের পর বহিষ্কৃত সেই নেতার কাছ থেকেই ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ এবং বরণ করা অত্যন্ত দুঃজনক। তিনি অভিযোগ করেন, দলের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। জেলার একজন শীর্ষ নেতার বাড়ি এই ইউনিয়নে। অথচ ওই নেতার নিজ কেন্দ্রে নৌকায় ভোট পড়েছে মাত্র ১৬টি। জেলার আরেক নেতা এবং তাঁর নিজ কেন্দ্রে ভোটার প্রায় দেড় হাজার। অথচ নৌকায় ভোট পড়েছে মাত্র ৩১৫টি। জেলার শীর্ষ নেতারা নিজেরাও নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বহিষ্কৃত নেতার ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

বিজয়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। জনসমর্থনে এগিয়ে থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও বিজয়ী হয়েছি। আমাকে দল থেকে কাগজে–কলমে বহিষ্কার করা হয়নি। শুধু মৌখিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক দেখা করে তাঁদের হাতে ফুল দিয়েছেন।

শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুল ইসলাম নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। শপথ নিলেই উপজেলা পরিষদের সদস্য হবেন। দুই দিন পরে তাঁকে নিয়ে একসঙ্গে সভা-সেমিনারসহ নানা সরকারি কাজ করতে হবে। উপজেলা পরিষদের একজন নির্বাচিত সদস্য ফুল হাতে সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে। এখানে দলীয় কোনো বিষয় নেই।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান ফোন ধরেননি। তবে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাড়াও তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান)। একজন নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ফুল হাতে বাসায় দেখা করতে এসেছেন। কাউকে তো আর বাসা থেকে বের করে দিতে পারেন না? সৌজন্য রক্ষার জন্যই তাঁর ফুল গ্রহণ করেছেন।