খুলনা নগরের শেরেবাংলা সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু দুই বছর পরও ওই কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ করতে আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষকে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ব্যয় ধরা হয় ১০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড অ্যান্ড মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের (জেভি) সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করে সড়ক বিভাগ। গত ৭ এপ্রিল চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সওজের হিসাবমতে, ওই সড়কের কাজ এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ বাকি। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, কাজে ধীরগতি, অপেক্ষাকৃত কম জনবল দিয়ে কাজ করাসহ বিভিন্ন কারণে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
আগামী এক বছরের মধ্যে সড়কের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছে সওজ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তির আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক ডিভাইডার, দুই পাশে ৮ কিলোমিটার কংক্রিটের ‘ইউ’ আকৃতির ড্রেন ও ৫টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এসব কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সড়ক বিভাগের চুক্তি হয়েছে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার।
সড়ক বিভাগের কাগজে-কলমে প্রকল্পের নাম ‘খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশ (৪ কিলোমিটার) ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প’। সড়কটি শেরেবাংলা সড়ক নামেই নগরবাসীর কাছে পরিচিত। নগরের ময়লাপোতা থেকে গল্লামারী হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের বিস্তৃতি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, ময়লাপোতায় অবস্থিত সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গা ঘেঁষে নালা তৈরি করা হচ্ছে। ওই কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে।
ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারীর দিকে বৃষ্টিতে সড়কে কাদা হয়ে আছে। আমতলার কাছে তৈরি করা হচ্ছে একটি কালভার্ট। কালভার্টটি এক পাশ ঢালাই দেওয়া অবস্থায় রয়েছে। নিরালা এলাকার তালুকদার কমিউনিটির সামনের কালভার্টটিও এক পাশে কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জিরো পয়েন্ট থেকে গল্লামারী হয়ে আলকাতরা মিল পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের দুই ইঞ্চি কার্পেটিং করা হয়েছে। বাকি অংশে বালু ও পাথর মিশিয়ে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলায় বালু সরে গিয়ে পাথর উঁচু হয়ে আছে। যার কারণে প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহনে চলার সময় যাত্রীদের ঝাঁকুনি লাগছে। প্রায় চার মাস আগে জিরো পয়েন্ট অংশে সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ কেবল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পর্যন্ত এসেছে।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেদায়েত উল্লাহ কাজের ধীরগতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাজ যে বন্ধ রয়েছে তা নয়। বর্তমানে যে কাজ রয়েছে, তা অল্প শ্রমিক দিয়েই করা সম্ভব। তিনি বলেন, মূলত কার্যাদেশ পাওয়ার পর সড়কের মাঝবরাবর থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতেই এক বছর ব্যয় হয়েছে। এর বাইরে কোভিড পরিস্থিতি, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ ব্যাহত হয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে নতুন নতুন কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।