সন্তান কোলে গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসী। এ ছবি এখন শুধুই স্মৃতি
ছবি: সংগৃহীত

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে এক গৃহবধূ বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে তিনি মারা গেছেন। ওই গৃহবধূর নাম জান্নাতুল ফেরদৌসী ওরফে শিখা (২০)। উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের কোলা গণিপুর গ্রামে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ওই গৃহবধূ স্বামীর বাড়িতে মারা যান। এ ঘটনার পর গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসী কোলা গণিপুর গ্রামের ভ্যানচালক রিপন হোসেনের (২৮) স্ত্রী। পুলিশ ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। লাশের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালশিটে দাগের চিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জান্নাতুলের স্বজনদের দাবি, চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আসার পর স্বামী তাঁকে আবারও মারপিট করেছেন। স্বামীর নির্যাতনেই জান্নাতুলের মৃত্যু হয়েছে।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত গৃহবধূর শরীরে কালশিটে দাগের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় জান্নাতুলের বাবা লিটন রাজা বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। এ মামলায় নিহত জান্নাতুলের স্বামী রিপন হোসেন ও তাঁর মা হাসনা বিবিকে (৫০) আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় স্বামী রিপন হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

জান্নাতুলের স্বজনদের দাবি, চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আসার পর স্বামী তাঁকে আবারও মারপিট করেছেন। স্বামীর নির্যাতনেই জান্নাতুলের মৃত্যু হয়েছে।

আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রুহুল আমিন বলেন, গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসী বিষ পান করেছিলেন। ১৯ সেপ্টেম্বর স্বজনেরা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলেন। গৃহবধূ সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জান্নাতুল ফেরদৌসীর শরীরে কোনো কালশিটে দাগের চিহ্ন ছিল না বলে তিনি জানিয়েছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসীর মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারি। বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কোলা গণিপুর গ্রামে
প্রথম আলো

নিহত নারীর স্বজন, গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রায় আড়াই বছর আগে উপজেলার হলহলিয়া গ্রামের লিটন রাজার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসীর সঙ্গে একই উপজেলার কোলা গণিপুর গ্রামের রিপন হোসেনের বিয়ে হয়। তাঁদের আট মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। রিপন হোসেন একজন ভ্যানচালক। সন্তান হওয়ার পর থেকে রিপন হোসেন তাঁর স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। দুই মাস ধরে তাঁর স্বামীর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ১৯ সেপ্টেম্বর জান্নাতুল ফেরদৌসী বিষপান করেন। ওই দিন দুপুরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করান। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আজ সকালে তিনি তাঁর স্বামীর বাড়িতে মারা যান।

বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত গৃহবধূর বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড়। দুজন পুলিশ সেখান থেকে নিহত গৃহবধূর স্বামী রিপন হোসেনকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তুলছিলেন। রিপন হোসেনের বাড়ির উঠানে পাশে নিহত গৃহবধূর লাশ পড়ে আছে। ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত স্বজনদের ভয়ে রিপন হোসেনের মা (গৃহবধূর শাশুড়ি) হাসনা বিবিকে পাশের বাড়ির একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। থানা-পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিহত গৃহবধূর উত্তেজিত স্বজনদের থামানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় জান্নাতুল ফেরদৌসীর লাশের পাশে স্বজনেরা কান্না করছিলেন।

নিহত নারীর বাবা লিটন রাজা প্রথম আলোকে বলেন, স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাঁর মেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা চেষ্টা করেছিলেন। হাসপাতাল থেকে স্বামীর বাড়িতে আসার পর তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করেছেন।