নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নে চা-শ্রমিকদের হেয় করার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী/ক্রেডিট চেকিং/সার্টিফিকেট সহকারী ও নাজির পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা-শ্রমিকদের হেয় করার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন চা-শ্রমিক ও শ্রমিকনেতারা। আজ শনিবার মৌলভীবাজার শহর, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে পৃথক তিনটি কর্মসূচিতে এ দাবি জানানো হয়।
গতকাল শুক্রবার ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০০ নম্বরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা-শ্রমিকদের ‘কুলি’ সম্বোধন করা হয়। এরপর থেকে চা-শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চা-শ্রমিকদের হেয় করতে ওই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
আজ দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সচেতন চা শ্রমিক-ছাত্র-যুবকবৃন্দ-এর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, চা-শ্রমিক ও ছাত্ররা অংশ নেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মোহন রবিদাস। সমাবেশে ইটা চা-বাগানে চা-শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন প্রত্যাশা বাংলাদেশের সাবেক সহসভাপতি নূরে আলম, ভুড়ভুড়িয়া ইয়াংস্টার সামাজিক সংগঠনের সভাপতি রিপন মৃধা, ভাড়াউড়া যুব উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু হাজরা, চা-কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খাইরুন আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, চা-শ্রমিকেরা দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত ও লাঞ্ছিত জনগোষ্ঠী। বিভিন্ন সময় চা-শ্রমিকদের হেয় করতে কুলিসহ বিভিন্ন অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেখানে চা-শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা-শ্রমিকদের কুলি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি হতাশাজনক। তাঁরা দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। অন্যথায় তাঁরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন।
এদিকে আজ বিকেলে শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার সড়কে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিবাদ সভায়ও বক্তারা বিতর্কিত ওই প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান। তাঁদের শাস্তি না হলে সারা দেশের চা-শ্রমিকেরা একসঙ্গে কর্মবিরতির ডাক দেবেন। এ বিষয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ প্রত্যাশা করেন।
চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, মনু-ধলই ভ্যালির সভাপতি ও ইউপি সদস্য ধনা বাউড়ি, লংলা ভ্যালির সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জুড়ি ভ্যালির সভাপতি কমল চন্দ্র বুনার্জী প্রমুখ। এ সময় বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ৭টি ভ্যালির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা-বাগান কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে চা-শ্রমিকেরা প্রতিবাদ সভা করেছেন। এ সময় তাঁরা নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দায় স্বীকার করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
মিরতিংগা চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মন্টু অলমিকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির সভাপতি ও ইউপি সদস্য ধনা বাউড়ি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কুলচন্দ তাঁতীসহ স্থানীয় চা-শ্রমিকনেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ধনা বাউড়ি বলেন, গতকাল রাতে ফেসবুকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে দুঃখ প্রকাশ করে সাদামাটা একটি বিবৃতি দেওয়া হলেও সাধারণ চা-শ্রমিকেরা সেটা মেনে নিচ্ছেন না। অবিলম্বে ভুলের দায় স্বীকার করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা না চাইলে সব কটি চা-বাগানে একযোগে বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গতকাল রাতে এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে সিলেট বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড। বিতর্কিত ওই প্রশ্নপত্র সিলেট বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড তৈরি করেছিল।
গতকাল সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তাঁদের সেন্টিমেন্টটা আমাদের নজরে এসেছে। এই সেন্টিমেন্টকে আমরা সম্মান করি। এ বিষয়ে আমাদের ও জেলা প্রশাসনের ফেসবুকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।’
ফেসবুকের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের অধীন নিয়োগ পরীক্ষায় চা-শ্রমিক বোঝাতে ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করায় সৃষ্ট অসন্তোষ বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কাউকে ছোট করা বা আঘাত করার জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড দুঃখ প্রকাশ করছে। সবার অনুভূতি ও ভাবাবেগের প্রতি বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়ানোর জন্য সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।’