নীলফামারীর দিনমজুর মজিবরের স্ত্রী ঈদে পেলেন নতুন শাড়ি

মজিবর রহমানের পরিবারকে নীলফামারী পুলিশ সুপারের ঈদ উপহার। সোমবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

৭৭ বছর বয়স্ক দিনমজুর মো. মজিবর রহমানকে নিয়ে গত রোববার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘৩০ থাকি ৩৫ বছর বউক নয়া কাপড় দিবার পারো নাই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি পড়ে মজিবর রহমানের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন অনেকে। গতকাল সোমবার রাতে নীলফামারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান তাঁর খোঁজখবর নেন। মজিবর রহমানের পরিবারের সদস্যদের ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য উপহারসামগ্রী পাঠান তিনি।

পুলিশ সুপারের উপহারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মজিবর রহমানের জন্য একটি পাঞ্জাবি-পায়জামা, তাঁর স্ত্রী মর্জিনা বেগমের (৬৫) জন্য একটি শাড়ি, নাতনি জান্নাতুন নেছার (১২) জন্য একটি থ্রি-পিস। সেই সঙ্গে রয়েছে সেমাই, চিনি, গুঁড়া দুধ, সাবান, মসলাসহ অন্যান্য সামগ্রী।

আরও পড়ুন

এর আগে গতকাল দুপুরে মজিবর রহমানের বাড়িতে যান নীলফামারী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নূরুল ইসলাম। তিনি মজিবর রহমানকে একটি লুঙ্গি, মর্জিনা বেগমকে একটি শাড়ি এবং এক হাজার টাকা দেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে একজন ফোন করে তাঁর খোঁজখবর নেন।

প্রতিবেশীরা জানান, মজিবরের বয়স বেশি হওয়ায় কেউ কাজেও নিতে চান না। কাজ কম করলে মজুরি কম দেবে এই ভয়ে তিনি টানা কাজ করেন। শুধু খাওয়ার সময়টুকু জিরিয়ে নেন।

উপহারসামগ্রী পেয়ে মজিবর রহমান বলেন, ‘মুই খুব খুশি হইচু মোর বউ নতুন শাড়ি পাইছে। মোর নিজেরো পায়জামা, পাঞ্জাবি লুঙি হইছে। মোর নাতনিটাও নয়া কাপড় পাইছে। নয়া কাপড় পরি হামরা ঈদ কইন্নো। সেমাই খাচি, গোশত খাচি। যায় হামার জইন্য এইলা কইচ্ছে, তার জইন্য দোয়া কচ্ছি।’ তাঁর স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘এইবারের ঈদটা হামার ভালো হইছে। হামরা সবার জন্য দোয়া করমো। আল্লাহ তোমার সবার ভালো কইরবে।’

নীলফামারী জেলা সদরের ইটাখোলো ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামে মজিবর রহমানের বাড়ি। সংসারে আছেন কেবল স্ত্রী মর্জিনা বেগম। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর আগে। স্ত্রীর ডান পা ফাইলেরিয়া রোগে (গোদ) আক্রান্ত। তাই তিনি কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। এ কারণে সংসারের সব দায়িত্ব মজিবরের কাঁধেই। তাঁর সহায়সম্পত্তি বলতে পৌনে দুই শতাংশ ভিটেটুকুই সম্বল।

মজিবর রহমানের জন্মনিবন্ধন সনদে জন্মতারিখ লেখা আছে ৪ অক্টোবর ১৯৪৫। সে হিসাবে তাঁর বয়স হয় প্রায় ৭৭ বছর। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর জন্মতারিখ লেখা আছে ৮ অক্টোবর ১৯৫৭।

প্রতিবেশীরা জানান, মজিবর রহমানকে দেখার মতো কোনো সন্তান না থাকায় এই বয়সে এসেও কাজ করতে হচ্ছে। এক দিন কাজ করলে দুই দিন অসুস্থ থাকেন। তখন সংসারে অনটন শুরু হয়। স্ত্রীও অসুস্থ, তিনিও কাজকর্ম করতে পারেন না। আর মজিবরের বয়স বেশি হওয়ায় কেউ কাজেও নিতে চান না। কাজ কম করলে মজুরি কম দেবে এই ভয়ে তিনি টানা কাজ করেন। শুধু খাওয়ার সময়টুকু জিরিয়ে নেন।

এর আগে মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘গরমে শরীল চলে না, তার পরেও কাম না কইরলে খামো কী? যেদিন কাম করির পারো না, সেদিন ধারকর্জ করি খাবার নাগে। বয়স্ক ভাতার কার্ড হছিলো, এক বছর খাইছি, পরে ভোটার আইডি কার্ডের হিসাবে সেখান বাতিল হইছে। জন্মনিবন্ধনত মোর বয়স ৭৭ বছর, আর আইডি কাডত বলে কম।’

সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে তিনি মজুরি পান ৩৫০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে চাল, ডাল, লবণ তেল, মরিচ, ওষুধও কেনেন। বয়স বেশি হওয়ায় মানুষ কাজেও কম ডাকেন। কাজ না থাকলে সেদিন কষ্ট বাড়ে। ঈদে কী কিনেছেন, জানতে চাইলে মজিবর রহমান বলেছিলেন, ‘বিয়ার পর প্রত্যেক ঈদোতে বউক নয়া নয়া কাপড় জামা কিনি দিছু। তখন মোর বয়স কম ছিল, কাম কামাই ভালো ছিল। এলা পেটের ভাত জুটির পারো না, কাপড় কিনিম কি দিয়া। আইজ ৩০ থাকি ৩৫ বছর যাবৎ বউক নয়া কাপড় দিবার পারো নাই। জাকাতের কাপড় দিয়ায় চলেছে।’