নোংরা পানিতে নিমজ্জিত, সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষ

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চারপাশ বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে সয়লাব থাকলেও এটি রক্ষায় কারও কোনো উদ্যোগ নেই।

দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানিতে তলিয়ে আছে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কবুরহাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ভবনের চারপাশে কালো দূষিত পানি। তাতে ভাসছে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য। হাঁটুসমান নোংরা পানিতে নিমজ্জিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। কারণ, সেখানেও এক হাঁটু নোংরা পানি।

গত দুই সপ্তাহ ধরে এ অবস্থায় রয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি। সেখানে সরকারিভাবে নারী ও শিশুদের বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া হতো। এ ছাড়া সর্দি-কাশি ও জ্বরের জন্য সাধারণ মানুষদেরও ওষুধ দেওয়া হতো। পানিবন্দী থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই এলাকার অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কবুরহাট এলাকায় তৎকালীন জগতি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ ক্লিনিক নামে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়। এরপর জগতি এলাকা কুষ্টিয়া পৌরসভার আওতাধীন হওয়ার পর এটি বটতৈল ইউনিয়নের আওতায় চলে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম খাজানগর এলাকার পাশে। সেখানে আশপাশের এলাকায় অন্তত ৩৫০টি চালকল রয়েছে। এসব চালকলে কয়েক হাজার নারীশ্রমিক রয়েছেন। যাঁরা বিভিন্ন সময়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের পাশে একটু নিচু এলাকায়। এর আশপাশে বড় বড় অটো রাইসমিল রয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কের পাশ দিয়ে ছোট নালা দিয়ে পানি চলে যেত। এ ছাড়া চালকলের দূষিত পানি ও বর্জ্যও নিষ্কাশন হতো। সম্প্রতি নালার ওপর বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি হওয়ায় পানি আর বের হতে পারে না।

সরেজমিন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরো এলাকা বিষাক্ত বর্জ্য ও কচুরিপানায় ময়লার স্তূপে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পাশে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা সড়কের কবুরহাট এলাকা দিয়ে চলাচলকারী হাজারো মানুষ দূষিত পানির দুর্গন্ধে নাকে কাপড় চেপে চলাফেরা করছেন। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের যাতায়াত না থাকায় এটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।

চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে আশপাশের কয়েকটি বাড়িও নোংরা পানিবন্দী। গাছপালা মরে গেছে। এলাকায় বসবাসকারী লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। একটু বৃষ্টি হলেই ওই পানি সড়কে উঠে যাচ্ছে।

কবুরহাট এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব আলী বলেন, ঈদের সময় থেকে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এ ছাড়া আশপাশের চালকলের বর্জ্যও এখানে আসে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চারপাশ চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে সয়লাব থাকলেও এটি রক্ষায় কারও কোনো উদ্যোগ নেই। প্রসূতি নারী ও শিশুরা কাছ থেকে সেবা নিতে পারত, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রমা প্রসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পর এসে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে নোংরা পানি। প্রতিদিন এই কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ সেবা নিতে আসতেন। বর্তমানে সেবা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, চালকল মালিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তাঁরা পানি বের করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বর্জ্যে এখন ছোট নালাটিও বন্ধ হয়ে আছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই ব্যাপারী রাইসমিল। এই মিলের মালিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পানি বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নালা না থাকায় কাজটি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে সমস্যার সমাধান হয়।

কুষ্টিয়া পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মিজানুল হক বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে তাঁরা কেউই তেমন ব্যবস্থা নেননি।

জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।