নোয়াখালীতে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলা, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সব নাগরিক সেবা

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হানিফ সবুজের (৫০) ওপর হামলার প্রতিবাদে ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ইউপি কার্যালয়ের সব সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সব সদস্য মিলে এ সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে আজ মঙ্গলবার অনেক সেবাগ্রহীতা ইউপি কার্যালয়ে এসে ফিরে গেছেন।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউপি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর স্থানীয় বিল্লা বাড়ির সামনের সড়কে চেয়ারম্যান হানিফ সবুজের ওপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। একই সময় হামলার শিকার হন তাঁর সঙ্গে থাকা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ খোকন (৪৫)। গুরুতর আহত অবস্থায় হানিফ সবুজকে প্রথমে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া অপর আহত ইউপি সদস্য শেখ ফরিদকে বসুরহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার শিকার ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ সবুজ অভিযোগ করেছেন, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ও ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ মোটরসাইকেলে করে ইউপি কার্যালয় থেকে বের হন। এ সময় তিনি দেখেন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী ফখরুল ইসলাম ওরফে সবুজ, তাঁর ভাতিজাসহ একদল লোক ইউপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন।

চেয়ারম্যান হানিফ সবুজ জানান, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি ইউপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে না গিয়ে বিকল্প আরেকটি সড়কে পরিষদ এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। তখন ফখরুলসহ অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বিল্লা বাড়ির সামনে তাঁর মোটরসাইকেল থামিয়ে রড, হকিস্টিক ও হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। হামলায় তাঁর ডান পা, বুকের পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে ও মাথা ফেটে গেছে। এ সময় ইউপি সদস্য শেখ ফরিদকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

চেয়ারম্যানের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন পরিষদের বাকি সদস্যরা। রাত ১১টা পর্যন্ত ওই সভা চলে। চেয়ারম্যান ও সদস্যের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সব নাগরিক সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জামাল উদ্দিন। আজ দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে দুজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হলো। অথচ পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা পুলিশসহ সবাই জানেন। আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত সব সেবা বন্ধ থাকবে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়কে জানিয়েছেন বলে জানান জামাল উদ্দিন।

ইউএনও মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারও ব্যক্তিস্বার্থে ইউপি কার্যালয়ে নাগরিক সেবা বন্ধ থাকতে পারে না। কেউ হামলার শিকার হলে থানায় মামলা করবেন, পুলিশ সেটি দেখবে। তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে থানার ওসিকে বলেছেন। সেবাপ্রত্যাশীরা এসে সেবা না পেলে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ সবুজ এবং একজন সদস্যের ওপর নিজের অনুসারীদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় একটি বিরোধ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ সবুজের ওপর হামলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা কেউই তাঁর অনুসারী নন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ সবুজের ওপর তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।