নোয়াখালীতে মন্দিরে হামলা-নিহতের ঘটনায় ১৮ মামলা, আসামি ৫ হাজার
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে গত শুক্রবার মন্দির, দোকানপাট ও বসতবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং ইসকনের দুই ভক্ত নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ও ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলার এজাহারে ২৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও চার থেকে পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চৌমুহনী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল হোসেন বাদী হয়ে ২৪৫ জনকে এজাহারভুক্ত ও আরও দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। পুলিশের এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ ছাড়া ইসকনের দুই ভক্ত যতন সাহা ও প্রান্ত চন্দ্র দাস নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ রত্নেশ্বর দেবনাথ ওরফে রসপ্রিয় দাস বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৮০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চৌমুহনীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আরও দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপূজায় সহিংসতার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট ১৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেগমগঞ্জে ৬টি, হাতিয়ায় ৮টি এবং সোনাইমুড়ী, কবিরহাট, চাটখিল ও সেনবাগ থানায় ১টি করে মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে চৌমুহনী শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়। তারা চৌমুহনী ডিবি রোডে (ফেনী-নোয়াখালী সড়ক) এসে হিন্দুদের দোকানপাট, মন্দির ও বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিজয়া পূজামণ্ডপ এলাকায় হামলায় যতন সাহা (৪২) এবং ইসকন মন্দিরে প্রান্ত চন্দ্র দাস (২৬) নামের দুজন নিহত হন। এ ছাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার, চার পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
এদিকে ১৩ ও ১৪ অক্টোবর জেলার হাতিয়া, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, কবিরহাট ও সেনবাগ উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।