নৌকার কর্মীরা স্বতন্ত্র ও জমিয়তের কর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থী
ছবি: সংগৃহীত

আগের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হলেও এবার তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি ও জমিয়তের কর্মীরা নৌকার পক্ষে এবং আওয়ামী লীগের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।

এলাকাবাসী ও ভোটাররা জানান, রানীগঞ্জ ইউপিতে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শামসুল ইসলাম অল্প ভোটে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবার তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছদরুল ইসলামের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চেয়ে সভা, সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করছেন শামসুল।

পাইলগাঁও ইউনিয়নের কাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুন্দর উদ্দিন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এ গ্রামের অধিকাংশ ভোটার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁরা প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন ও ভোট চাইছেন।

পাটলী ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আঙ্গুর মিয়ার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইতে দেখা যায় ইউনিয়নের জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের নেতা-কর্মীদের। এই ইউনিয়নে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ শাহীনুর পাশা চৌধুরীর বাড়ি। সম্প্রতি শাহীনুরের বাড়িতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থনে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তাঁর স্বজন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ইউনিয়ন সভাপতি বক্তব্য দেন।

আশারকান্দি, কলকলিয়া, চিলাউড়া হলদিপুর, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। পাটলী ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজকর্মী শেখর আচার্য বলেন, স্থানীয় নির্বাচনকে এখন মানুষ দলীয় বিবেচনায় দেখছেন না। ইউনিয়নে নৌকার প্রচারে জমিয়তে নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পাটলী ইউনিয়নের সভাপতি মাওলানা ফখর উদ্দিন বলেন, ‘পাটলী ইউনিয়নে আমাদের কোনো প্রার্থী না থাকায় আমাদের নেতার নির্দেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।’

পাটলী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল হক বলেন, ‘গত ইউনিয়ন নির্বাচনেও আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইউনিয়নবাসী ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এবারও নির্বাচিত করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

পাইলগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুম মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর উদ্দিনের ভরসা তাঁর নিজ গ্রাম কাতিয়া। এ গ্রামে কখনো নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয় না। হেফাজতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই গ্রামে এবার নৌকা বিজয়ী হতে পারে।
সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসান বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী হলেও এলাকার ছেলে হিসেবে আমি দল–মতনির্বিশেষে ভোট প্রার্থনা করছি। সবাই সাড়া দিচ্ছেন।’

জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ইউপি নির্বাচনে অনেক নেতা-কর্মী দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলা আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এম এ মতিন বলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে সব সময়ই স্থানীয় ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, আত্মীয়তা ও সামাজিকতা কাজ করে। তাই এ নির্বাচন নির্দলীয় থাকা দরকার।