পঞ্চগড়ে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় নবদম্পতি মারধরের শিকার
নতুন বউকে (১৮) নিয়ে খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন সুরুজ আলী (২২)। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে খালার বাড়ির পাশে একটি কালভার্টে বেড়াতে যান তিনি। এ সময় স্থানীয় দুই তরুণ তাঁর স্ত্রীকে অশালীন কথাবার্তা বলে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। প্রতিবাদ করেন সুরুজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই তরুণ সুরুজের স্ত্রীর হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে সুরুজের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
একপর্যায়ে সুরুজ ও তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করেন তাঁরা। এতে অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান সুরুজ। পরে সুরুজের স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ওই নবদম্পতিকে উদ্ধার করে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে তাঁরা সেখানে চিকিৎসাধীন। রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের দারখোর-ফকিরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করা, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে টেনেহিঁচড়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং স্বামী-স্ত্রী দুজনকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে আটোয়ারী থানায় একটি অভিযোগ করেছেন সুরুজ আলী। অভিযোগে তোড়িয়া ইউনিয়নের দারখোর এলাকার লুৎফর রহমান (২১) ও মো. জুয়েল (২৪) এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। মারধরের শিকার সুরুজ আলী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের জুগিকাটা এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন কৃষক বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুরুজ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র চার মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। রোববার আমরা দাওয়াত খেতে দারখোর এলাকায় খালার বাড়িতে যাই। বিকেলে স্ত্রীকে নিয়ে খালার বাড়ির পাশে একটি কালভার্টে বেড়াতে যাই। তখন স্মার্টফোন দিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনের ছবি তুলছিলাম। এ সময় ওই দুই তরুণ এসে অশ্লীল ভাষায় আমার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। পরে প্রতিবাদ করলে তাঁরা আমাদের কাছে এসে আমার স্ত্রীর হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন। এ সময় তাঁরা আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করবেন বলেও হুমকি দেন। এতে বাধা দিতে গেলে তাঁরা দুজন মিলে আমাদের বেধড়ক মারপিট করতে থাকেন। এতে আমি অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে আমার স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আমাদের উদ্ধার করে একটি ইজিবাইকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাঁরা আমার স্ত্রীর গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁরা আমার গলা টিপে ধরে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। ’
অভিযুক্ত দুই তরুণের মধ্যে জুয়েলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি কিছুটা দূরে ছিলাম। দারখোর এলাকার একটি ব্রিজে (কালভার্ট) ওই ছেলে আর মেয়ে (সুরুজ ও তাঁর স্ত্রী) দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। এ সময় লুৎফর নাকি মেয়েটিকে টিজ করেছেন। এ নিয়ে ওই ছেলে (সুরুজ) আর লুৎফরের কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁদের হাতাহাতি হয়। এতে লুৎফরের মাথা ফেটে রক্ত বের হওয়ায় আমি সেখানে গিয়ে ছেলেটাকে (সুরুজকে) কয়েকটা চড়থাপ্পড় দিয়েছি মাত্র। এ ছাড়া আমরা তাঁর স্ত্রীকে টানাটানি বা মারধর করিনি। ’
আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই দম্পতির মধ্যে সুরুজ আলীর কপালে ও গলায় দাগ রয়েছে। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কিল-ঘুষির মাধ্যমে আহত হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে তাঁরা দুজনই শঙ্কামুক্ত।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মেহেদী হাসান সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগকারীদের কাছে বিষয়টি মুঠোফোনে জেনেছি। এ ছাড়া আমি বাইরে থাকায় এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ থানার ডিউটি অফিসারকে দিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’