পটুয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশস্থলে হামলা, পথে পথে বাধা
পটুয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া ওই সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা–কর্মীদের ওপর পথে পথে হামলা চালানো হয়েছে। এতে বিএনপির ৫০ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালীর শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্কে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তবে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ জেলা বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার দাবিতে জেলা শহরের শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্কে সমাবেশ আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা। বেলা ১১টার দিকে আগুন–সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশের মাঠে ঢুকে পড়ে ৫০–৬০ জন হামলাকারী। এ সময় তারা মঞ্চের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা সমাবেশ স্থলে এসে মঞ্চ আবার সজ্জিত করেন এবং চেয়ার সাজিয়ে রাখেন।
বিভিন্ন উপজেলা দিয়ে শহরের প্রবেশপথে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির নেতা–কর্মীদের। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব¯স্নেহাংশু সরকার জানান, সমাবেশস্থলে তাঁদের নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি ঠেকাতে শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথে আওয়ামী লীগের কর্মীরা পাহারা বসিয়েছিলেন। তাঁরা সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাধা দেন এবং তাঁদের ওপর হামলা চালান।
স্নেহাংশু সরকার আরও বলেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলার নেতা–কর্মীরা ট্রলারে পটুয়াখালী এলে সেই ট্রলারে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে অনেক নেতা–কর্মী আহত হন। এ ছাড়া লাউকাঠি ও লোহালিয়া খেয়াঘাটে নেতা–কর্মীরা বাধার মুখে পড়েন। একসময়ে খেয়ানৌকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কালিকাপুর, পটুয়াখালী সেতু, বাঁধঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় তাঁদের অন্তত ৫০ জন নেতা–কর্মী আহত হন। আহত নেতা–কর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর ও দলের সমাবেশস্থলে হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, জেলা বিএনপির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসলে বিএনপির দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি এখন মিথ্যা মামলার আসামি। কিন্তু তাঁর নামে যে দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, সেই টাকা ব্যাংকে রয়েছে। সারা জীবন যিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এখন মিথ্যা মামলায় বন্দী। তিনি এখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাই দ্রুত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল নগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। তারেক জিয়াকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। এভাবে দেশ চলতে পারে না।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ মিয়া। সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানসহ জেলা, উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার।