পত্নীতলায় আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারজানা পারভীনের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার কমলাবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ফারজানা পারভীনের স্বজনদের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী আবু বক্করের সমর্থকেরা রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
৫ জানুয়ারি ঘোষনগর ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যায় এ ইউপির দুটি কেন্দ্রের ব্যালট ও মালামাল উপজেলার ফলাফল নিয়ন্ত্রণকক্ষে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ফারজানা পারভীনসহ ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও আড়াই হাজার মানুষকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। ওই মামলায় ফারজানা ও তাঁর স্বামী মতিউর রহমানসহ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে ঘোষনগর ইউপি নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে।
কমলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে ফারজানা পারভীনের বাড়ির গ্যারেজে আগুন দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। ভোটের দিন সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে বর্তমানে ওই গ্রাম পুরুষশূন্য। আগুন দেখে গ্রামের নারীরা প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা পর পত্নীতলা ও মহাদেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বাড়ির প্রায় সব মালামাল পুড়ে যায়।
ফারজানা পারভীনের জামাতা আতিকুর রহমান জানান, তাঁর শাশুড়ি ও শ্বশুর দুজনই জেলে আছেন। তিনিও পরিবার নিয়ে নওগাঁ শহরে থাকেন। শ্বশুরবাড়িতে বর্তমানে কেউ নেই। এ সুযোগে গতকাল রাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবু বক্করের লোকজন আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। গ্রেপ্তারের ভয়ে ওই গ্রাম পুরুষশূন্য হওয়ায় রাতে আগুন নেভানোর মতো কেউ ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসতে আসতে বাড়ির পাঁচটি মোটরসাইকেল, আসবাব, ধান পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ১৫-১৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
আতিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আধিপত্য বিস্তার ও নির্বাচনের দিন সহিংসতার ঘটনার জেরে আবু বক্করের লোকজন আমার শ্বশুরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু বক্কর। তিনি বলেন, ভোটের ফলাফলে এখন পর্যন্ত তিনি এগিয়ে আছেন। তাই এসব সহিংসতা–অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তোলা অবান্তর। গতকাল রাতের ঘটনার সঙ্গে তিনি ও তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা কেউ জড়িত নন। ফারজানা পারভীনের লোকজন নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাঁর ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
পত্নীতলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রায়হান ইসলাম বলেন, আগুনে বাড়ির অধিকাংশ মালামাল পুড়ে গেছে। এটা শত্রুতার জেরে ধরিয়ে দেওয়া আগুন, নাকি শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
জানতে চাইলে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম বলেন, ফারজানা পারভীনের বাড়িতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শত্রুতার কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকলে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো লিখিত অভিযোগ পায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।