২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পদত্যাগকারী হেফাজত নেতা কাসেমীর স্বীকারোক্তি আদালতে

আব্দুর রহিম কাসেমী
সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হেফাজতের পদত্যাগকারী নেতা মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী। রোববার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসাইন ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. রইছ উদ্দিন ও জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ৪ মে বিকেল চারটার দিকে শহরের ভাদুঘর এলাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আব্দুর রহিম কাসেমীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আব্দুর রহিম কাসেমী জেলা হেফাজতের সাবেক যুগ্ম সাধারণ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গত ২৩ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে এক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। আব্দুর রহিম কাসেমী জেলার কান্দিপাড়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব ছিলেন। গত বছরের ১ ডিসেম্বর তাঁকে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষাসচিবসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আব্দুর রহিম কাসেমী জেলা হেফাজতের সাবেক যুগ্ম সাধারণ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গত ২৩ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে এক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

আব্দুর রহিম কাসেমীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. রইছ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের জন্য হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত মার্চ মাসে তিন দিনের সহিংসতা চালানো হয়। এই সহিংসতার ঘটনায় জড়িত জেলা হেফাজতের অনেক নেতার নাম তিনি বলেছেন। নিজের সম্পৃক্ততার কথাও স্বীকার করেছেন। আর ২০১৬ সালে ঘটনার সময় তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উভয় ঘটনায় জড়িত অনেকের নাম বলেছেন। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এসব নাম বলা যাচ্ছে না।

আব্দুর রহিম কাসেমী (সামনের সারিতে মাঝে)
ফাইল ছবি

পুলিশ বলছে, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত আব্দুর রহিম কাসেমী এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ মুরব্বিদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেফাজতের ছাত্র-শিক্ষকেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক সহিংসতা চালান।

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল লিখিত বিবৃতিতে হেফাজতের এই নেতা বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জেলার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় খেদমত করেছেন। তিনি সর্বশেষ মাদ্রাসায় শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে গত বছরের ১ ডিসেম্বর তাঁকে জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সব দায়–দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং মাদ্রাসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে গত বছর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করে।

আব্দুর রহিম কাসেমী তখন বলেন, হেফাজতে ইসলামের চলমান কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি জড়িত না। তাদের সব ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমকে তিনি শরিয়তের দিক থেকে অবৈধ মনে করেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতের সব কার্যক্রম এবং জাতীয় ও জেলা কমিটির সব পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।

জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আব্দুর রহিম কাসেমী গত মার্চ মাসের সহিংসতায় কার কার নেতৃত্বে ও নির্দেশে মাদ্রাসাছাত্ররা অংশ নিয়েছে, সেসব নেতার নাম বলেছেন। সহিংসতায় কারা কারা কোথায় থেকে অংশ নিয়েছেন, সেসবও জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতায় ঘটনায় ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।