পদ্মায় তীব্র স্রোত, ফেরি চলাচল ব্যাহত
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহন দ্রুত পার হতে না পারায় উভয় ঘাটে আটকা থাকছে যানবাহন। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১০টি রো রো (বড়), ৬টি ইউটিলিটি (ছোট) ও দুটি মাঝারি ফেরি রয়েছে। মাঝেমধ্যে এক-দুটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে থাকলেও অন্য ফেরি চলাচল করে। এই নৌপথে গাড়ি পারাপার স্বাভাবিক রাখতে ছোট-বড় মিলে ১৫ থেকে ১৬টি ফেরি যথেষ্ট। পদ্মা-যমুনার মাত্র ছয় কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে আগে সময় লাগত ২০ থেকে ২৫ মিনিট। বর্তমানে যমুনা নদী স্বাভাবিক থাকলেও পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে এই সামান্য নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে পৌনে এক ঘণ্টার মতো।
সোমবার সকালে দৌলতদিয়ায় ঘাট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘাট ছেড়ে যাওয়া ফেরি কিছু পথ উজানে গিয়ে মোড় নিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিটে পাটুরিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। যত সমস্যা পদ্মা নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার পথে। পদ্মা পাড়ি দিতে পারলেই যমুনা স্বাভাবিকভাবে পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া পৌঁছে যাচ্ছে। ওই ফেরি পাটুরিয়া থেকে স্বাভাবিক গতিতে যমুনা পাড়ি দিয়ে পদ্মায় প্রবেশ করা মাত্র স্রোতের তোড়ে ভাটিতে ভেসে যাচ্ছে। স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গিয়ে ফেরির ইঞ্জিনের গতি সর্বোচ্চ বাড়াতে হচ্ছে। এরপরও ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের আগে দৌলতদিয়ায় ভিড়তে পারছে না ফেরি। স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফেরি ভিড়তে পারছে না। ভাটিতে থাকা ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে ভিড়ছে। ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগায় ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। যে কারণে দ্রুত পাড়ি দিতে না পারায় ঘাটে আটকে থাকছে ফেরি।
ঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ সারিতে পণ্যবাহী যানবাহন ফেরির জন্য অপেক্ষা করছে। আবার ফেরিঘাট এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ির দুটি সারি পড়ে আছে। এসব গাড়ি আরও এক দিন আগে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় ১৩-১৪ কিলোমিটার পেছনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় আহ্লাদিপুর এলাকায় আটকে ছিল।
ঝিনাইদহ থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের চালক দবির শেখ সকালে ক্যানাল ঘাট এলাকায় আটকে থাকা অবস্থায় আলাপকালে বলেন, শনিবার বিকেলে তাঁরা একত্রে চারটি গাড়ি গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা করে রাতে গোয়ালন্দ মোড় পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়। রোববার দিন শেষে মধ্যরাতে তাঁদের একত্রে প্রায় ৫০টির মতো গাড়ি ছাড়ে। দু-তিন দিন করে মহাসড়কে থাকা, গোসল করা, খাওয়াদাওয়া এবং প্রকৃতির কাজ সারতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা দূরপাল্লার যানবাহন চালক ও সহকারীরা জানান, প্রতিদিন সকালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা করেন। ওই সব গাড়ি দুপুর নাগাদ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কাছে এসে পৌঁছায়। এরপর ফেরির নাগাল পেতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম বলেন, বর্তমানে সব কটি ফেরি চললেও পদ্মার তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে ফেরি বন্ধ থাকায় অনেক গাড়ি বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘুরে গেলেও কিছু গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছে। এসব কারণে ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে।