পদ্মা সেতুর সুফল পাবে এবার কুয়াকাটা
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বালুচরে ছাতা-বেঞ্চে লোক বসিয়ে সংসার চালান নূর হোসেন। আজ শনিবার কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। নূর বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে মানুষ ভালোই আইবে বইলা মনে হইতেছে। পর্যটকের সংখ্যা বেশি হইলে আমাগো লাভও বেশি হইবে। আগের ক্ষতিও আমরা কাডাইয়া উঠতে পারমু।’
কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলছিলেন, এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ বেশি হবে। ঝিমিয়ে পড়া পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও চাঙা হবে। হোটেল-মোটেলের বুকিং দেখে তা–ই মনে হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের চাপ বেশি হওয়ার একমাত্র কারণ বলে তিনি জানান।
নূরের মতোই কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধারণা, এবার ঈদের ছুটিতে ব্যবসা ভালো হবে। শুঁটকি ব্যবসায়ী, শামুক-ঝিনুকের দোকানদার, বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, মোটরসাইকেল–ভ্যান–অটোচালক, সৈকতের ছাতা-বেঞ্চ ব্যবসায়ী, চা-পানের দোকানদার, চটপটি বিক্রেতা, ট্যুর অপারেটরসহ পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের বরণ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন।
সৈকতে শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা সালেহ আহমেদ বললেন, ‘আমরা কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা সব সময় ক্ষতির শিকার হয়েছি। গত দুই বছরের করোনাকাল, একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যবসায়িক মন্দা ছিল। এবার আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আর তার অন্যতম কারণ হলো পদ্মা সেতু। এখন ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ অতি সহজেই কুয়াকাটায় চলে আসতে পারবে।’
পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সেতু হওয়ায় আগের মতো ফেরি পারাপারের যেমন ভোগান্তি থাকছে না, তেমনি কুয়াকাটায় পৌঁছাতে সময়ও কম লাগবে। আর তাতেই বাড়তে পারে পর্যটকের সংখ্যা।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ বলেন, একসময় ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪টি ফেরি সার্ভিস ছিল। সে কারণে কুয়াকাটায় পৌঁছাতে ২৪ থেকে ২৫ ঘণ্টা সময় লাগত। সর্বশেষ ভোগান্তি ছিল মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের ফেরি। এখন সেখানে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। এতে দখিনের দুয়ার খুলে গেছে। এতে মাত্র ছয় ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছানো যায়। এ কারণে কুয়াকাটায় এবার অন্য বছরগুলোর চেয়ে পর্যটক বেশি হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবার চট্টগাম, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর থেকেও পর্যটকেরা আসছেন, এ খবর তাঁদের কাছে রয়েছে বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটার পূর্ব ও পশ্চিম পাশে রয়েছে ফিশ ফ্রাই করে বিক্রি করার দোকান। এখানকার ফিশ ফ্রাইয়ের দোকানিরাও ভালো বিক্রির আশায় নানা ধরনের মাছ কিনে ফ্রিজে মজুত করে রেখেছেন। মো. মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, পর্যটকের অনেকেই টুনা ফিশ পছন্দ করেন। এ জন্য কমবেশি টুনা ফিশ অনেকেই সংগ্রহ করে রেখেছেন। এ ছাড়া কাঁকড়া, কোরাল, চিংড়ি, লবস্টার, রুপচাঁদাও কিনে রাখা হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, ‘সাগরের জলরাশিতে বেড়ানোর জন্য লাইফবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে স্পিডবোট, ওয়াটার বাইক। যে যেটা পছন্দ করেন, তিনি সেটাতে উঠে ঘুরতে পারবেন। আমরা কুয়াকাটার নিকটবর্তী লেম্বুর চর, ফাতরার চর, গঙ্গামতী, আশার চরে পর্যটকদের যাতায়াতের জন ব্যবস্থা নিয়েছি। কেউ যদি চর বিজয় ভ্রমণ করতে চান, সে ব্যবস্থাও রয়েছে আমাদের।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১৫টির মতো। এতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজারের মতো পর্যটক রাত যাপন করতে পারবেন। এক সপ্তাহ আগে প্রায় প্রতিটি হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি, আগে শুধু শীতকালে কুয়াকাটায় বেশি পর্যটক বেড়াতে আসতেন, এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে সারা বছরই কুয়াকাটায় পর্যটকেরা আসতে পারবেন। সেভাবেই আমরা সবকিছু ঢেলে সাজিয়ে নিচ্ছি। এককথায় বলতে পারি, আগামী দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকবে।’
কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে, এটা আমরাও মনে করছি। সবার নিরাপত্তা দিতে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটন পুলিশের বেশ কয়েকটি দল এ জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পর্যটকেদের যাঁরা এসে গোসল করার জন্য সাগরের পানিতে নামবেন, যাতে কোনো দুর্ঘটনায় কেউ না পড়েন, সে জন্য তাঁদের সতর্ক করতে পর্যটন পুলিশের আলাদা দল তৎপর থাকবে।’