ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান ওরফে সুমনকে (২৮) স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শরীফ মিয়া (২২)।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমান ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
শরীফ মিয়া উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বাঘাউড়া গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবীনগর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার পরপর পুলিশ বলেছে, গুলি করে আতিকুরকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর পুলিশ বলেছে, নিহত ব্যক্তির বুকে ছিদ্রযুক্ত আঘাতের চিহ্ন থাকলেও পিঠে কোনো ছিদ্র নেই। ধরালো কোনো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত আতিকুর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলিপুর গ্রামের মৃত আবু মিয়ার ছেলে। তিনি ৭-৮ বছর ধরে নবীনগরে বসবাস করে আসছিলেন। পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে বাঘাউড়া গ্রামের আবুল হাসানের বাড়ির সেমি পাকা টিনের ঘরে ভাড়ায় বসবাস করছিলেন তিনি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলিপুর গ্রামের সোহেল মিয়া (২৫) নামে এক কর্মচারীও তাঁর ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন এবং আতিকুরের সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার ভোরে সাহ্রি খাওয়ার পর ফজরের নামাজের জন্য দরজা খোলেন আতিকুর। দরজা খুলতে না খুলতেই শরীফ তাঁর বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। আতিকুরের সঙ্গে থাকা দোকানের কর্মচারী সোহেল এগিয়ে গিয়ে চিৎকার শুরু করেন। তখন প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় আতিকুরকে উদ্ধার করে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠান। নিহত আতিকুরের বড় ভাই সজিবুর রহমান মোসাদ্দর বাদী হয়ে মঙ্গলবার নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মো. শাহীন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে প্রথম আলাকে বলেন, নবীনগরে থাকার সুবাদে বাঘাউড়া গ্রামের শরীফ মিয়ার স্ত্রী খাদিজা আক্তার ওরফে সাথীর (১৮) সঙ্গে আতিকুরের পরিচয় হয়। সম্পর্কের উন্নতি হলে তাঁরা একপর্যায়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পারেন শরীফ। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া লেগে সাথী কয়েক দিন আগে বাবার বাড়ি চলে যান। সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার জন্য আতিকুরকে নিষেধ করেন শরীফ। কিন্তু একাধিকবার নিষেধের পরও আতিকুর খাদিজার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক চালিয়ে যান। এতে শরীফ ক্ষুব্ধ হয়ে আতিকুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাহ্রি খেয়ে ঘর থেকে বের হলেই আতিকুরকে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান শরীফ। এতে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়।
মোল্লা মো. শাহীন আরও বলেন, শরীফের দেওয়া তথ্যে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছেও হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।