পরিচয় গোপন করে প্রেম, পরে অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যা
সেলুনশ্রমিক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮)। নিজের পরিচয় গোপন করে নিজেকে সানি আহমেদ ও বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসে। পরে তাকে অন্য তিন বন্ধুর সহায়তায় অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যা করেন কৃষ্ণ চন্দ্র দাস।
গত সোমবার ধর্ষণের পর হত্যা করে ওই ছাত্রীর লাশ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর তারাকান্দি সড়কের পাশে ফেলে দেন কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ও তাঁর তিন বন্ধু। পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত শনিবার টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
ওই ছাত্রীর বাড়ি গোপালপুর উপজেলায়। এবার সে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আজ রোববার বিকেলে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি স্কুলছাত্রীকে গত সোমবার অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যা এবং বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ ছাড়া তাঁর ওই তিন বন্ধুও আদালতে জবানবন্দি দেন।
কৃষ্ণ চন্দ্র দাস গোপালপুর উপজেলার ভেঙ্গুলা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন ধনবাড়ী উপজেলার ইসপিনজারপুর গ্রামের সৌরভ আহমেদ (২৩), মেহেদী হাসান (২৮) ও মিজানুর রহমান (৩৭)।
টাঙ্গাইল পিবিআইর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত মঙ্গলবার ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের বীরবড়ুয়া এলাকা থেকে বস্তাবন্দী ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ভূঞাপুর থানা-পুলিশ লাশটির ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে। পরে টাঙ্গাইল পিবিআই অজ্ঞাতনামা ওই লাশের পরিচয় এবং হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে। পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান আনসারির নেতৃত্বে একটি দল তথ্যপ্রযুক্তি এবং স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এই লাশ ওই ছাত্রীর বলে চিহ্নিত করে। পরে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গত শুক্রবার ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা করেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, কৃষ্ণ চন্দ্র জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে ওই ছাত্রীর পরিচয় হয়। তখন তিনি নিজের প্রকৃত নাম ও পেশা গোপন করেন। নিজেকে সানি আহমেদ এবং একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। পরে তিনি (কৃষ্ণ) গ্রেপ্তার অন্য তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা আরও জানান, গত সোমবার গোপালপুর উপজেলা সদরে থানা সেতুর মোড়ে কৃষ্ণ চন্দ্রের সঙ্গে ওই ছাত্রী দেখা করতে আসে। এ সময় কৃষ্ণ ওই ছাত্রীকে নিয়ে তাঁর বন্ধু সৌরভের মোটরসাইকেলে ওঠেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁরা ধনবাড়ীর বন্ধু মিজানুরের ভাড়া বাড়িতে যান। সেখানে একটি কক্ষে ওই ছাত্রীকে কৃষ্ণ ধর্ষণ করেন। এ সময় সৌরভ ও মিজানুর পাশের রুমে ছিলেন। ওই ছাত্রী চিৎকার শুরু করলে গামছা গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন কৃষ্ণ। পরে ওই ঘরে ছাত্রীর লাশ রেখে তাঁরা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে আনেন। রাতে তাঁরা তিনজন মিলে ওই ছাত্রীর লাশ বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেলে দিতে অটোরিকশায় রওনা হন। কিন্তু নদীর পাড়ে মানুষ দেখে সেখান থেকে তাঁরা ফিরে আসেন। পরে তাঁরা ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের পাশে তার লাশ ফেলে দেন।
রোববার বিকেলে গ্রেপ্তার চারজনকে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে প্রথমে কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলাম তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য তিন আসামির জবানবন্দি নেন মো. আরিফুল ইসলাম।