বিষাক্ত মদ পানে মৃত্যু
পরিবারগুলো চরম দুর্দশায়
পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে এসব পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন।
বগুড়ায় বিষাক্ত মদ পানে নিহত ১৮ শ্রমজীবীর মধ্যে বেশির ভাগের পরিবার এখন চলছে দুর্দশার মধ্য দিয়ে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে এসব পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। লকডাউনের মধ্যে তাঁরা আরও মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এদিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বগুড়ায় বিষাক্ত মদ পানে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দুজন। গত শুক্রবার গাবতলীর শহীদুল ইসলাম (৩৫) নামের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনিও পেশায় শ্রমজীবী।
বগুড়ায় এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বিষাক্ত অ্যালকোহল পান করে ১৮ শ্রমজীবীর মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন সুমন রবিদাস (৩০)। তাঁর পরিবারে স্ত্রীসহ দুই সন্তান আছে। সন্তানেরা পঞ্চম ও প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। রবিদাসের স্ত্রী-সন্তান থাকে পুরান বগুড়ার দক্ষিণপাড়া বস্তিতে।
স্বামীকে হারিয়ে বর্তমানে দিশেহারা রবিদাসের স্ত্রী কান্তি রানী। তিনি বলেন, সংসার এখন প্রায় অচল। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। বিষাক্ত মদ পানে সুমনের বাবা প্রেমনাথ রবিদাস (৭০) ও চাচা রামনাথ রবিদাসও (৬০) মারা যান। এই দুই পরিবারেও দুর্দশা নেমে এসেছে।
প্রেমনাথের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সাগর রবিদাস সংসারের হাল ধরেছেন। তিনি এখন শহরের স্টেশন সড়কে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। সাগর বলেন, দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হতো। লকডাউনের কারণে উপার্জন প্রায় বন্ধ। নিজের সংসারই চলে না। এখন বৃদ্ধা মা, বউদি, দুই ভাতিজির দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে। সংসারের বোঝা টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।
সদর উপজেলার ফাঁপোড় পশ্চিমপাড়ার একটি ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করতেন জুলফিকার রহমান (৫৫)। তাঁর আয়েই সাত সদস্যের পরিবার চলত। জুলফিকারের ছেলে মামুনুর রশিদ (৩০) বলেন, তাঁর বাবার মদ পানের নেশা ছিল। সেই নেশাই কাল হলো। প্রতিদিনের খরচের বাইরে ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ আছে। অবস্থা এমন—মদ বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে তা চালিয়ে নেওয়ার মতো টাকাও নেই।
মদ পানে মারা যাওয়া অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার আবদুল জলিল, দক্ষিণপাড়ার পলাশ মণ্ডলসহ আরও কয়েকজনের পরিবারে খোঁজ নিয়েও দুর্দশার কথা জানা যায়।
এদিকে মদ পানে প্রাণহানির ঘটনায় ২ ফেব্রুয়ারি সদর থানায় মনোয়ার হোসেন নামের একজন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এই মামলায় বিভিন্ন হোমিও ল্যাবরেটরিজের চারজন মালিক ও কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিরা আদালত থেকে জামিন পান।