‘পর্বত’কে বিক্রির কথা শুনে ছোট্ট মৌলির কান্না
বাড়িতে জন্ম নেওয়া বাছুরটি তিন বছরে দেখতে দেখতে উঁচু-লম্বা হয়ে গেছে। ছোট্ট মৌলির (৮) কাছে এ যেন পর্বতের মতো দেখতে। তাই তো আদর করে নামও রেখেছে পর্বত। বাড়ির একমাত্র মেয়ে মৌলি পর্বতের গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে সে চোখ বন্ধ করে থাকে। গরুটি বিক্রির কথা শোনার পর থেকেই মৌলির কান্না থামছে না।
কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের হাটপাড়া গ্রামের মহিরুল ইসলাম। তাঁর বাড়িতে রয়েছে ২৮ মণের কাছাকাছি ওজনের একটি ষাঁড়, যাকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বিক্রি করতে যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি। কুচকুচে কালো গরুটির সুঠাম শরীর, বিশাল আকার। একে দেখতে মহিরুলের বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছে মানুষ। ঈদ আসন্ন, তাই যত দ্রুত সম্ভব গরুটিকে বিক্রি করতে চান মহিরুল। কিন্তু লকডাউনের কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তিনি।
তিন বছরে গরুটির ওজন হয়েছে ২৮-৩০ মণ। গরুটির সুঠাম শরীর, বিশাল আকার। একে দেখতে মহিরুলের বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছে মানুষ।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মহিরুলের বাড়িতে জন্ম হয় পর্বতের। ছোট্ট বাছুরটিকে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই লালন-পালন শুরু করেন বাড়ির সবাই। পর্বতকে ভৈরব নদের তীরে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় মৌলি। কেবল মৌলি ডাকলেই মাথা নেড়ে সাড়া দেয় সে। মসৃণ শরীর, দেখতে সুন্দর ফ্রিজিয়ান প্রজাতির এই গরু গরম সহ্য করতে পারে না। এ কারণে গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক ফ্যান টাঙানো হয়েছে।
মহিরুল বলেন, পর্বতের পাঁচবেলা খাবারতালিকায় ঘাসের পাশাপাশি থাকে আখের গুড়ের শরবত, ওরস্যালাইন ও ভুসি, বিচালি, সবুজ ঘাস, ভুট্টা ও খৈল। দুই বেলা গোসল করানো, সময়মতো খাবার দেওয়া, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে মশারি টানানো, গরমের সময় শরীর শীতল রাখতে বাতাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিন বছরে গরুটির ওজন হয়েছে ২৮-৩০ মণ।
মহিরুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, সকালে গমের রুটি তৈরির সময় পর্বত ডাকাডাকি শুরু করে। গোয়ালঘর আর রান্নাঘর পাশাপাশি হওয়ার কারণে পর্বতের ডাকাডাকি শুনে অস্থির হতে হয়। প্রথম রুটিটি দ্রুত তৈরি করে আগে পর্বতকেই খাওয়ানো হয়। সন্তানের মতো লালন–পালন করে চোখের সামনে এত বড় হয়েছে। বিক্রি করার কথায় মনটা ভারী হয়ে ওঠে।
মহিরুল বলেন, ‘সকালে গোয়ালঘর থেকে বের করে উঠানে মোটরের পানিতে সাবান দিয়ে গোসল করানো হয়। আমার মা আর মৌলি তাকে পর্বত নামে ডাকে। ডাকলে কান নেড়ে সাড়া দেয়। পর্বতের দাম ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। গরুটি কিনতে এলাকার অনেক ব্যাপারী যোগাযোগ করছেন। এ কথা শোনার পর থেকে আমার মা, মৌলি ও স্ত্রীর মন খারাপ।’ তবে গরুটি এখনই বিক্রি করার উপযুক্ত সময় বলে জানান মহিরুল।