পর্যটকের অপেক্ষায় মৌলভীবাজারের বন-পাহাড়ের সবুজ উদ্যান

মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
ছবি: প্রথম আলো

দুই বছর তো ঘরেই আটকা সময় গেছে। এক টুকরা জানালা, নয়তো এক চিলতে বারান্দা, এক চিলতে ছাদই ছিল মুক্ত হাওয়ার দেশ। এবার সেই বাধা সরেছে। যেন খোলা হাওয়া ডাক পাঠিয়েছে ঘরে ঘরে। দেয়াল সরার সেই উচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ছে বন-পাহাড়, হাওর-নদী, চা-বাগান আর সমতলের মায়ার প্রকৃতিতে। ঈদুল ফিতরের ছুটি, অবসর সবুজ প্রান্তরে শ্বাস ফেলার উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।

পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের সব হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে সেই উচ্ছ্বাসের ইঙ্গিত মিলছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টে বুকিং দিয়েছেন পর্যটকেরা। পর্যটকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে যেমন তৈরি হয়ে আছে হোটেল-রিসোর্টগুলো, তেমনি প্রশাসনও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এই ঈদে জেলার পর্যটন স্থানগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

হোটেল-রিসোর্ট মালিক, প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই মৌলভীবাজার জেলা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি স্থান। জেলাজুড়ে বন-পাহাড়, হাওর-নদী, চা-বাগানসহ সমতলের অনেক জায়গাই পর্যটকদের কাছে টানে। পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রে আছে জেলার ৯২টি চা-বাগান। আছে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কাবিল, বধ্যভূমি। কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, ধলইয়ে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, রাজকান্দি বন। বড়লেখায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর। রাজনগরের কমলা রানির দীঘি, কাউয়াদীঘি হাওর, জলের গ্রাম অন্তেহরি। মৌলভীবাজার সদরে প্রাচীন স্থাপত্যের খোজার মসজিদ, অজ্ঞান ঠাকুরের দেউল। জুড়ীতে কমলার বাগানসহ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। কুলাউড়ার গগনটিলা, কালাপাহাড়। এ ছাড়া আছে আদিবাসী খাসিয়া (খাসি) পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম। মৌলভীবাজারের এই প্রকৃতি ও জনজাতির বৈচিত্র্য পর্যটকদের বরাবরই আকর্ষণ করছে।

মৌলভীবাজারের চা বাগান
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের বিলাসবহুল হোটেল থেকে শুরু করে সাশ্রয়ী সব রিসোর্ট পর্যটকেরা ইতিমধ্যে বুকিং দিয়েছেন। ৪ মে থেকে ৭ মে পর্যন্ত কোনো হোটেল-মোটেল খালি নেই। ৪ মের আগেও প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ হয়ে আছে। জেলায় ৬০ থেকে ৭০টি হোটেল ও রিসোর্টে ৪ থেকে ৫ হাজার পর্যটক থাকতে পারেন।

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের মহাব্যবস্থাপক আরমান খান শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বুকিং চলছে। ৪ থেকে ৭ মে পর্যন্ত চাপটা ভালো আছে।’

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামসুল হক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, শ্রীমঙ্গলেই ছোট–বড় ৬০টির বেশি হোটেল-রিসোর্ট আছে। ঈদ কেন্দ্র করে আগে থেকেই সেগুলো বুকিং দেওয়া হয়েছে। তবে ৫ ও ৬ মে এই দুই দিন প্রায় শতভাগ বুকিং হয়েছে। কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। ঈদের পরদিন থেকে বেশি পর্যটক আসবেন। অনেকেই ৫ ও ৬ মে হোটেল পাননি। তাঁরা ব্যক্তিগত গাড়িতে আসবেন। ঘুরে চলে যাবেন। তিনি বলেন, ‘এবার পর্যটকের ভালো উপস্থিতি আশা করছি।’

পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, হোটেল-রিসোর্ট ৫০ থেকে ১০০ ভাগ বুকিং হয়ে গেছে। শহরের বাইরেরগুলোতে বুকিং হয়েছে বেশি। বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে রুম ভাড়া দুই হাজার টাকার ওপরে। এ জন্য সেগুলোতে বুকিং কম। এ মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটক আসতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, হোটেল-মোটেল পরিপূর্ণ। ঈদের পরদিন থেকে শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও মাধবকুণ্ডে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।