পর্যটক টানতে হোটেলভাড়া ৬০% ছাড়, তবুও ফাঁকা সৈকত

ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগমের আশা হোটেলমালিকদের। উখিয়ার পাটোয়ারটেক সৈকত।
ছবি : প্রথম আলো

করোনা মহামারি, কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গত বছরের কোরবানির ঈদে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের সমাগম নিষিদ্ধ ছিল। বন্ধ ছিল তিন হাজারের বেশি দোকানপাট-ব্যবসাকেন্দ্র। এবারের কোরবানির ঈদে সমুদ্রসৈকত–সংলগ্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক টানতে হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজগুলোতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ রেয়াত ( ছাড়) দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় পর্যটকের তেমন সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন হোটেলমালিকেরা। আজ শনিবার কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে অবস্থান করেন অন্তত চার হাজার পর্যটক। পর্যটক না থাকায় পুরো সৈকতও ফাঁকা যাচ্ছে।

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত ৪ মে থেকে টানা ১০ দিনের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছিলেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক। এই ঈদুল আজহার ঈদের ১০ দিনের ছুটিতে পাঁচ লাখ পর্যটকদের সমাগম আশা করা হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসের দৈনিক পর্যটকের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার।

শহরের কলাতলী সৈকত তীরে চারতলার ‘রেইন ভিউ’হোটেলে কক্ষ আছে ৪০টি। আজ দুপুরে হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, ফাঁকা। ঈদুল আজহার পরের দুই দিনের জন্য (১২ ও ১৩ জুলাই) হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে ছয়টি। হোটেলের ব্যবস্থাপক পারভেজ শাহদাত বলেন, পর্যটক টানতে তাঁরা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষভাড়া ছাড় দিচ্ছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত হোটেলে অতিথি ছিলেন দুজন।

একই অবস্থা পাশের ১২তলা ‘সি উত্তরা’ হোটেলের। হোটেলের মহাব্যবস্থাপক ওসমান গণী বলেন, তাঁরাও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছেন, কিন্তু পর্যটকের সাড়া মিলছেন না। এ পর্যন্ত ১২ ও ১৩ জুলাইয়ের দুদিনের জন্য হোটেলে অগ্রিম কক্ষ বুকিং হয়েছে মাত্র ১০টি। হোটেলে কক্ষ আছে ৭০টি।

শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার অন্তত ৫০টি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটা হোটেলে তিন থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তা–ও সীমিত সময়ের জন্য।

কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, পর্যটক টানতে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হোটেল কক্ষভাড়ায় ছাড় দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু পর্যটকের তেমন সাড়া মিলছে না। তবে তারকা মানের ৮-৯টি হোটেলের কক্ষভাড়া আশানুরূপ ৩০-৪০ শতাংশ হলেও মাঝারি মানের হোটেলের অবস্থা খারাপ। মাত্র ১০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তাতে হতাশ হোটেলের মালিকেরা।

সমুদ্রসৈকতে তীরে পাঁচ তারকা হোটেল ‘সি গাল’। তাতে কক্ষ আছে ১৭৯টি। আজ হোটেলে অতিথি ছিল ৪০ জনের বেশি। সি গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ঈদের পরবর্তী দুই দিন ১৩ ও ১৪ জুলাইয়ের জন্য সি গালের ৫০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। পরের দিন ১৪ জুলাইয়ে অতিথি কমে ১৫ শতাংশে নেমে আসে, এরপর দিন আরও কমেছে। কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে তাঁরা ছাড় দিচ্ছেন সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ।

সি গাল হোটেলে পেছনের সারিতে আরেক তারকা মানের হোটেল ‘ কক্সটুডে’। এ হোটেলে কক্ষ আছে ২৭০টি। ঈদ–পরবর্তী কয়েক দিনের জন্য অগ্রিম বুকিং হয়েছে ৩০ শতাংশ কক্ষ জানিয়ে হোটেলের মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সৈকতে পর্যটকের সমাগম নিষিদ্ধ ছিল, হোটেলগুলোও খালি পড়েছিল। কোরবানির এই ঈদের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করা হলেও সাড়া মিলছে না।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, করোনার মহামারির আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের কোরবানির ঈদের ছুটিতেও চার লাখের বেশি পযটক সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন, তখন ৬০ শতাংশ হোটেল কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছিল। এখন ১০-১৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। বিশেষ রেয়াত ঘোষণা করেও কেন পর্যটকের সাড়া মিলছে না; তার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে।

আজ শনিবার বিকেলে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, চার কিলোমিটারের বিশাল সৈকতে নেমেছেন মাত্র হাজারখানেক মানুষ। তার মধ্যে স্থানীয় লোকজনও আছেন। সৈকতের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট বন্ধ। কিছু দোকানপাট-রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হলেও ক্রেতা নেই মোটেও। হোটেল–মোটেল জোনের ব্যস্ততম সৈকত সড়কটিও অনেকটা ফাঁকা, যানবাহনের দৌড়ঝাঁপও তেমন নেই।