পাওনা টাকা না দেওয়ায় রিকশাচালকের পায়ে শিকল দিয়ে নির্যাতন, আটক ১
গাজীপুরের শ্রীপুরে পাওনা টাকার জন্য এক রিকশাচালকের পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে অভিযুক্ত হাবিজ মোড়ল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই রিকশাচালকের নাম মোফাজ্জল হোসেন (৩৫)। তিনি শ্রীপুরের টেপিরবাড়ি গ্রামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। একই গ্রামের মো. হাবিজ মোড়লের কাছ থেকে মোফাজ্জল হোসেন আড়াই হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তবে নির্ধারিত সময়ে সুদসহ টাকা পরিশোধ না করায় হাবিজ মোড়ল ও মো. তাইজুদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি মোফাজ্জল হোসেনের পায়ে শিকল পরিয়েছেন।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘটনার সময় রিকশাচালককে ঘিরে ১৫ থেকে ২০ জন লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভিডিওতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি রিকশাচালকের পায়ের তালা খুলে দিতে বলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত কয়েকজন ভিডিও করতে চাইলে হাবিজ মোড়ল বলেন, ‘ভিডিও করুইন যে।’ পরে তাইজুদ্দিন বলছিলেন, ‘আমহে ভিডিও করুইন আর যা–ই করুইন, টেহা পাই, টেহা দেয়া যাইব!’ এ সময় ওই রিকশাচালককে বলতে শোনা যায়, ‘আতো (হাত) বন্দো, পাওয়ে (পা) বানছো কেয়া।’
ঘটনার সময় উপস্থিত লোকজনের প্রশ্নের উত্তরে রিকশাচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিনি সময়মতো ৫০০ টাকার সুদ দিতে পারছিলেন না। এ জন্য তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছে। একপর্যায়ে রিকশাচালককে পায়ে তালা লাগানো অবস্থায় হাবিজ মোড়ল ও তাইজুদ্দিন অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিকলের কারণে মোফাজ্জল হোসেন ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না। পরে তাঁর পায়ের শিকল খুলে অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিকলে বেঁধে রাখা রিকশাচালক ও তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আফসার উদ্দিন আজ বেলা ১১টায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি খবর পেয়ে সন্ধ্যায় রিকশাচালকের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে জানতে পেরেছেন, দুই পক্ষ বিষয়টি সমঝোতা করে তাঁরা নিজেরাই বিরোধ মীমাংসা করে ফেলেছেন।