পাটুরিয়ায় যাত্রী ও যানবাহনের তীব্র চাপ, চরম ভোগান্তি

মানিকগঞ্জর পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। আজ সকাল ১০ টার দিকে পাটুরিয়ার তিন নম্বর ঘাট এলাকায়।ছবি: আবদুল মোমিন

ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জের বানিয়াজুরী থেকে টেপড়া এলাকা পর্যন্ত ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন। এদিকে ভোর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এসব কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো যাত্রী।

সকাল থেকে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটেও যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ পড়ে। লঞ্চে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা থাকলেও যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ফেরি ও লঞ্চে ওঠে পড়েন।

ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকেরা জানান, গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা ঈদে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। এদিন বিকেলের পর থেকে পাটুরিয়ায় যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়ে। এর প্রভাব পড়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়ও। পুলিশের সদস্যরা মহাসড়ক ও পাটুরিয়া ঘাটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করায় গতকাল সন্ধ্যার পর চাপ কিছুটা কমে এলেও আজ সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় এবং ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন ছোট গাড়ির চাপও পড়েছে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়। আজ বেলা ১১টার দিকে যাত্রীবাহী বাসগুলো ঘাট এলাকা ছেড়ে উথলী-পাটুরিয়া সংযোগ সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ সারিতে আটকা পড়েছে। পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাট থেকে নালী-টেপড়া সড়কের আমডালা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে ব্যক্তিগত বিভিন্ন গাড়ি আটকা পড়েছে। এসব যানবাহনের যাত্রীদের দীর্ঘ সময় নদী পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রী বলেন, ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছাতে স্বাভাবিক সময়ে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগে। বর্তমানে সেখানে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগছে। এ ছাড়া পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এসে তিন থেকে চার ঘণ্টা করে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আটকে থাকতে হচ্ছে।

ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকাল বাসে করে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা পাটুরিয়া পুরোনো টার্মিনাল এলাকায় নামছেন। আসছেন। এরপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজেই তাঁরা প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে ফেরি ও লঞ্চঘাটে পৌঁছাচ্ছেন।

এদিকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এসব বাসের যাত্রীদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে ঘাটে আটকে থাকতে হচ্ছে। কোনো যাত্রী বাস থেকে নেমে ফেরিতে গিয়ে ওঠেন। এসব যাত্রীর অধিকাংশই পোশাক কারখানা ও নিম্ন আয়ের মানুষ। লঞ্চঘাটেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে কোনো কোনো লঞ্চে অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ফেরিতেও গাদাগাদি করে যাত্রীদের নদী পার হতে দেখা গেছে। ঘাট এলাকায় পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করেও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারছেন না। যাত্রীরা আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সকাল থেকেই পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কে আটকে থাকতে হচ্ছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব যানবাহনের সারি দীর্ঘ হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া-উথলী সংযোগ সড়কের আরসিএল মোড় এলাকায় আটকে থাকা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ফরিদপুরগামী যাত্রী আবদুস সোবহান বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে ঘাটে আটকে আছি। ফেরিতে উঠতে আরও দুই ঘণ্টা লাগবে বলে মনে হচ্ছে।’

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টির মধ্যেই স্ত্রী ও এক শিশুসন্তানকে নিয়ে হেঁটে ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন পোশাকশ্রমিক আবদুল হালিম (২৮)। মাথায় তাঁর মালামালভর্তি ব্যাগ আর এক হাতে শিশুসন্তান। স্ত্রীর হাতেও ছিল ব্যাগ। ৩ নম্বর ফেরিঘাটে কথা হলে তিনি বলেন, ‘একবার ভাবছিলাম কষ্ট করে বাড়ি যাইব না। কিন্তু বছরে দুই ঈদেই বাড়ি যাই। বছরে তো আর বাড়ি যাওয়া হয় না।’
জেলা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ঈদের আগের দিন হওয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপে মহাসড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসের চেয়ে লোকাল বাসের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকাগামী পশুবাহী যানবাহন বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে মহাসড়কের কোথায় যানজটের সৃষ্টি হয়নি।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। আজ যাত্রী ও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। তবে দুপুরের পর এই পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।