পাটুরিয়া ঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের সারি

ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে। যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়িগুলো ফেরির জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। শনিবার সকালে পাটুরিয়ার জিরো পয়েন্ট এলাকায়।ছবি: আব্দুল মোমিন

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। শনিবার দুপুরে পাটুরিয়া প্রান্তে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, দুই শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘ সময় ঘাট এলাকায় আটকে থাকায় যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এদিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচলকারী চারটি লঞ্চের মালিককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) স্থানীয় কর্মকর্তা জানান, লকডাউন শিথিল হওয়ায় গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এই সুযোগে ঈদে ঘরমুখী অনেক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। এ কারণে পাটুরিয়ায় যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ছোট গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। এতে পাটুরিয়া প্রান্তে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়েছে। তবুও প্রতিটি বাসকে ঘাটে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা দুইটার দিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকা ছেড়ে আরসিএল মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাসের সারি ছিল। এখানে শতাধিক যাত্রীবাহী বাস আটকা রয়েছে। দুটি ট্রাক টার্মিনালে চার শতাধিক এবং উথলী সংযোগ সড়কে আরও শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের আশপাশের এলাকায় শতাধিক ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি সারিবদ্ধভাবে আটকা রয়েছে।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবির বলেন, ঈদে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ বাড়ছে। সেখানে চাপ এড়াতে উথলী সংযোগ সড়কে শতাধিক সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি সারিতে রাখা হয়েছে। যানবাহনের চাপ কমলে এসব পণ্যবাহী গাড়ি ঘাট এলাকায় পাঠানো হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা পাটুরিয়া হয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। এ কারণে পাটুরিয়ায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

বিআইডব্লিটিসি আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই নৌপথে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি ফেরি পাটুরিয়ায় ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে।

বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় ফরিদপুরগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসের যাত্রী রাকিব হাসান বলেন, সকাল ছয়টায় ঢাকার গাবতলী থেকে তাঁকে বহনকারী বাসটি ছেড়ে দেয়। সকাল নয়টার দিকে পাটুরিয়ার আরসিএল মোড় এলাকায় তাঁদের বাসটিও আটকা পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে থাকার পর ফেরিতে ওঠার সুযোগ হয়।

পাটুরিয়া ৫ নম্বর এলাকায় আটকা পড়েছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি। বেলা একটার দিকে সেখানে আটকে থাকা একটি প্রাইভেট কারের আরোহী ইমরান হোসেন বলেন, ‘গণপরিবহনে করোনার ঝুঁকি বেশি, তাই প্রাইভেট কার ভাড়া করে যশোরে গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে যাচ্ছি। এক ঘণ্টা ধরে ঘাটে আটকা আছি।’

তবে পণ্যবাহী পরিবহনের শ্রমিকেরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। দুই দিনেও নদী পার হতে পারেননি অনেক শ্রমিক। ঘাট এলাকাতেই আটকে থেকে তাঁদের নিজ পকেটের টাকা খরচ করে খেতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে সয়াবিন তেল নিয়ে যশোরে যাচ্ছিলেন ট্রাকশ্রমিক আরশেদ আলী (৪৫)। পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে কথা হলে তিনি বলেন, শুক্রবার ভোরে পাটুরিয়ায় আসার পর থেকে টার্মিনালে আটকে আছেন। শনিবার দুপুরেও তিনি ফেরির টিকিট পাননি। তাঁর মতো অনেক পণ্যবাহী পরিবহনের শ্রমিক দুর্ভোগের কথা জানান।
এদিকে লোকাল বাসে করে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীরা আসছে। তারা লঞ্চে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া প্রান্তে যাচ্ছে। পাটুরিয়ায় ২০টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।

পাটুরিয়ায় ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামিউল হক বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ চলাচল করে। সামনে ঈদ, দিন যত যাবে ঘাটে ততই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের যাত্রী ও যানবাহনের চাপ পড়েছে। তবে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে আগে পারাপার করা হচ্ছে। এর ফাঁকে দু-একটি করে পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে।

চার লঞ্চমালিককে জরিমানা

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচলকারী চারটি লঞ্চের মালিককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। দুপুরে অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার এই জরিমানা করেন।

এই নৌপথের এমভি পানসি নামের লঞ্চের মালিককে ৩ হাজার, এমভি ব্ল্যাক বার্ড নামের লঞ্চের মালিককে ৫ হাজার, এমভি অনিকা নামের লঞ্চের মালিকে ২ হাজার এবং এমভি ফাতেহা নুর নামের লঞ্চের মালিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে পাটুরিয়া লঞ্চঘাট হয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। দুপুরে এসব যাত্রীদের নির্বিঘ্নে নৌপথ পারাপারের ক্ষেত্রে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে যায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তারসহ একটি দল। এ সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ওই চারটি লঞ্চের মালিককে জরিমানা করা হয়।
অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লঞ্চ সার্ভিস চালু রাখার বিষয়ে মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করতেও বলা হয়েছে।

তবে পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দি বলেন, করোনা বিস্তার রোধে কঠোর লকডাউন শিথিল করায় ২২ দিন বন্ধ থাকার পরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চালু হয়। এ কারণে লঞ্চের অনেক মালিকই কাগজপত্র নবায়ন করতে পারেননি। ঈদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলার যাত্রীর নির্বিঘ্নে পারাপার করতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে বলে তিনি জানান।