পানির কষ্ট কেটেছে রোজিদের, কলমাকান্দায় পাহাড়িদের মধ্যে স্বস্তি
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড়ি গ্রামগুলোতে পানির সংকট পুরোনো। তীব্র দাবদাহে সেই সংকট আরও বেড়েছে। পাহাড়ে এখন বিশুদ্ধ পানির হাহাকার চলছে। এর মধ্যে রংছাতি ইউনিয়নের হাতিবেড় চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রোজি, বণিতা, মণিকা সাংমাদের পানির সমস্যা আরও প্রকট ছিল। কিন্তু এখন থেকে তাঁদের আর পানির জন্য হাহাকার করতে হবে না। তাঁদের বাড়িতে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনসহ পানি সংরক্ষণে এক হাজার লিটারের একটি ট্যাংকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে আশপাশের প্রায় ২৫টি পরিবারের পানির সমস্যা মিটবে।
আজ সোমবার বিকেলে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান প্রধান অতিথি হয়ে গভীর নলকূপটি উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত রায়, চিকিৎসক অলক সিংহ, সুপার স্টার গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে লেংগুরা, খারনৈ ও রংছাতি ইউনিয়ন মূলত পাহাড়ি এলাকা। পাহাড়ি গ্রামে সুপেয় পানির সংকটে তাঁদের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে। গভীর নলকূপ না থাকায় সুপেয় পানির জন্য এক থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। পাহাড়ি ছড়ার (নালা) ময়লাযুক্ত পানি বা টিলার নিচে তিন চাকের তৈরি অগভীর কূপের ঘোলা পানিই তাঁদের ভরসা। এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এ নিয়ে গত ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে ‘নেত্রকোনায় ৩৫টি পাহাড়ি গ্রামে গারোরা পানির কষ্টে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসে ‘সুপার স্টার গ্রুপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। ওই প্রতিষ্ঠানের আবদুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে হাতিবেড় চন্দ্রডিঙ্গা এলাকার রোজি সাংমাদের বাড়িতে গভীর নলকূপটি বসানো হয়।
সুপার স্টার গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পানির সমস্যা নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি আমাদের এমডির (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) নজরে এলে তাঁর নির্দেশে নলকূপটি স্থাপন করা হয়েছে। কলমাকান্দার বিভিন্ন এলাকায় আরও সাতটি নলকূপ বসানো হবে।’
নলকূপ পেয়ে রোজি সাংমা বলেন, তাঁদের বাড়িসহ আশপাশের ১৫টি বাড়িতে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশের ঝরনা থেকেও পানি আসে না। বাধ্য হয়ে এক মাইল হেঁটে অন্যের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। তিন মাস ধরে ওই বাড়ির নলকূপেও পানি না আসায় কুয়ার ময়লা পানিই ভরসা ছিল। এখন নলকূপ পেয়ে তাঁরা খুবই খুশি।
জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, কলমাকান্দার পাহাড়ি অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সমস্যা প্রকট হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে এসব অঞ্চলে পানির সমস্যা দূর হবে।