রাজশাহীতে পদ্মা ও নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি খানিকটা কমলেও বেড়েছে কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পানি। ধরলার পানি গতকাল রোববার বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পদ্মা ও তিস্তার পানি কমলেও গতকাল পর্যন্ত পানিবন্দী ছিল বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের বাসিন্দা আফসার আলী ভরা বর্ষা মৌসুমে বন্যা না হওয়ায় জমিতে আমন রোপণ করেন। শেষ সময়ে এসে হঠাৎ করে ধরলার পানি বাড়ায় সে জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি দু–এক দিনের মধ্যে নেমে গেলে সমস্যা হবে না বলে জানান আফসার। তবে আরও বাড়লে চারা নষ্ট হয়ে যাবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ধরলার পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমতে শুরু করবে। এরই মধ্যে জেলায় ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় পানি কমতে শুরু করেছে।

নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি কমলেও ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চার হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গতকাল এই জেলায় পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি ও ছাতুনামা চরের আট শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। পানি কিছুটা কমলেও ওই দুই চরের প্রায় সাড়ে ছয় শ পরিবার এখনো পানিবন্দী। ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে ওই সব এলাকার মানুষজন তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

পূর্ব ছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, তিস্তা নদীর বন্যায় তাঁর ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ১০০ পরিবার বন্যাকবলিত হয়। এখন পানি কিছুটা কমলেও ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের প্রায় আট শ পরিবার পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তুলনায় কম।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রানী রায় বলেন, তিস্তা নদীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণের জন্য ১৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই চাল বিতরণের পর প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত শনিবার বেলা তিনটা থেকে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার পানি কমে। গতকাল বেলা তিনটায় ৮৮ রামপুর-বোয়ালিয়া, রাজশাহী স্টেশনে পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৭ দশমিক ৭৩ মিটার। এর আগের দিন একই সময় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৮৫ মিটার।

রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৮৩ মিটার। এরপর শনিবার সকাল পর্যন্ত পানি স্থিতিশীল ছিল। শনিবার দুপুরে ২ সেন্টিমিটার বেড়েছিল। এরপর গতকাল ভোরে ৭ সেন্টিমিটার কমে ১৭ দশমিক ৭৮ মিটার হয়। বেলা তিনটায় আরও পাঁচ সেন্টিমিটার কমে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।

এনামুল হক বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার পানি কমলেও এখনই পানি বৃদ্ধির সময় ফুরিয়ে যায়নি। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত পানি বাড়ার মৌসুম থাকে। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না যে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি আবার বাড়তেও পারে।

পদ্মার পানিতে এখন রাজশাহী মহানগরীর ৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি মহল্লা এবং জেলার পবা, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। স্রোতের তোড়ে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙনও দেখা দিয়েছে। এতে নগরের শ্রীরামপুর এলাকার টি-গ্রোয়েন ঝুঁকিতে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে পাউবো বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে বলে গতকাল জানা যায়।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী এবং প্রতিনিধি, কুড়িগ্রামনীলফামারী]