পাবনায় বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ছে, সতর্কতার আহ্বান চিকিৎসকদের
‘একটি ফোন কল, বিনা মূল্যে বাড়িতে পৌঁছে যাবে অক্সিজেন।’ বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন পোস্ট প্রায়ই চোখে পড়ছে। পাবনায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অনেকেই এভাবে করোনা রোগীদের সহযোগিতায় বিনা মূল্যে হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এ রকম মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদও জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। তবে অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা না জেনে ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
সারা দেশের মতো পাবনাতেও বিনা মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের কাজ করছেন বেশ কিছু ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। জেলায় বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করেন, এমন তিনজন স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে অক্সিজেনের চাহিদার ব্যাপারে জানালে তাঁরা রোগীর বাড়িতে বা হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেন।
জানতে চাইলে পাবনার বেসরকারি শিমলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সরওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। তবে অক্সিজেন ব্যবহারে সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের অবস্থা জানতে হবে। এরপর প্রয়োজন ও পরিমাপ অনুযায়ী অক্সিজেন দিতে হবে। ফলে বাড়িতে বসে ইচ্ছামতো অক্সিজেন গ্রহণ উচিত নয়। অক্সিজেন নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক ও রোগী উভয়েরই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
এটা ভালোর চেয়ে অনেক সময় খারাপ করছে। কিন্তু কাউকেই বিষয়টি বোঝানো যাচ্ছে না। শারীরিক অন্য কোনো সমস্যার কারণে রোগীর মৃত্যু হলেও অক্সিজেন সংকটের কথা বলা হচ্ছে। তাই চিকিৎসকেরাও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
গত বুধবার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৯৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ রোগীর মুখেই অক্সিজেন মাস্ক দেখা গেছে। এর মধ্যে কেউ নিয়েছেন হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন, আবার কেউ সিলিন্ডারের অক্সিজেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক সালেহ মোহাম্মদ আলী জানান, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ অক্সিজেন ব্যবহারের একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ জনের অক্সিজেন প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে বাইরে থেকে অক্সিজেন কিনে গ্রহণ করছেন। অনেকে হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ লাইন থেকে ইচ্ছামতো অক্সিজেন নিচ্ছেন।
সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা ভালোর চেয়ে অনেক সময় খারাপ করছে। কিন্তু কাউকেই বিষয়টি বোঝানো যাচ্ছে না। শারীরিক অন্য কোনো সমস্যার কারণে রোগীর মৃত্যু হলেও অক্সিজেন সংকটের কথা বলা হচ্ছে। তাই চিকিৎসকেরাও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
ইচ্ছামতো অক্সিজেন নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে অক্সিজেন নিতে হবে, এটা ঠিক। তবে সেটির একটি সঠিক পরিমাপ রয়েছে। তাই অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সতর্ক হওয়ার ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।