পাহাড়ি ঢলে দুই উপজেলার ১৪টি গ্রাম প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ধানের জমি। ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়ক। আজ শুক্রবার সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর খলাভাঙা গ্রামেপ্রথম আলো

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে গ্রামগুলোর সদ্য রোপণ করা আমনের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভোগাই নদের বাঁধে সৃষ্ট ভাঙনের অংশ দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই ঢলের পানি গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের নিচপাড়া এলাকায় ভোগাই নদের ৫০ মিটার বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দনগর, মরিচপুরানের ফকিরপাড়া, দক্ষিণ কোন্নগর ও খলাভাঙা এলাকায় ভোগাই নদের সাড়ে তিন হাজার মিটার বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বাঁধের এই ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে  মরিচপুরান, যোগানিয়া ও কলসপাড়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের প্রায় কয়েক হাজার রোপা আমনের খেত পানিতে ডুবে রয়েছে। কৃষকেরা পানিতে ডুবে থাকা ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে ভোগাই নদের পানি আজ শুক্রবার থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে আমনের খেত। আজ শুক্রবার সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর মরিচপুরান গ্রামে
প্রথম আলো

মরিচপুরানের খলাভাঙা গ্রামে ভোগাই নদে আগের ভেঙে থাকা এক হাজার মিটার বাঁধ দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মরিচপুরান থেকে খলাভাঙা যাতায়াতের সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ঢলের পানিতে পাশের ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গোরকপুর, চরগোরকপুর, পাবিয়াজুড়ি, রামনগর ও ডোবার পাড় এলাকার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে।

খলাভাঙা গ্রামের জাকিরুল ইসলাম বলেন, বাঁধের সংস্কার না করায় নদীতে ঢল এলেই হালুয়াঘাটের ৩-৪টি গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাতের ঢলে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানিতে মরিচপুরান থেকে খলাভাঙা যাতায়াত সড়কের কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
যোগানিয়া গ্রামের কৃষক মোর্তুজ আলী বলেন, ‘দুবার ঢলের পানিতে আমাদের আমনের খেত নষ্ট হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে আবার ঢলের পানিতে কয়েক শ একর জমির আমনের খেতে ডুবে আছে। ঢলের পানি নিয়ে এলাকার সব কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে ৩০০ হেক্টর জমির আমনের খেত পানিতে ডুবে আছে। গত দুই দফা ঢলের পানিতে ফসল ডুবে যাওয়ায় কৃষকেরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।

বাঁধে ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শেরপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ভোগাই নদের ভাঙনকবলিত বাঁধ সংস্কারের জন্য একটি নতুন প্রকল্প করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।