পিপিই নেই, তাই চিকিৎসক স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই গত ২৬ মার্চ থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে (বাড়িতে পৃথক কক্ষে) অবস্থান করছেন। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ রিয়াজুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ রিয়াজুল আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চিকিৎসক আরেফিনকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কোনো ছুটির দরখাস্ত না দিয়ে চার দিন যাবৎ কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। আরেফিনকে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অনুপস্থিতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিতে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, সরকার ২৬ মার্চ থেকে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তবে চিকিৎসকদের এ নির্দেশনার বাইরে রেখে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক আরেফিন অন্য সরকারি চাকরিজীবীর মতোই ২৬ মার্চ থেকে কর্মস্থলে আসছেন না। এতে জরুরি বিভাগে রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।

জানতে চাইলে চিকিৎসক আরেফিন আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজন রোগী শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন প্রবাসী রোগীর সর্দি, কাশি ও জ্বরের উপসর্গ দেখতে পান। এসব রোগী দেখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) নেই। গত বৃহস্পতিবার থেকে আমারও সর্দি, কাশি ও জ্বর শুরু হয়েছে। এ কারণে গ্রামের বাড়িতে (কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা) স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, বাড়িতে থাকার কারণ তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানিয়েছেন।

চিকিৎসক আরেফিনের দাবি নাকচ করে দিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রিয়াজুল আলম বলেন, ‘দুজন নয়, একজন রোগী ২৪ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে নয়, হৃদ্‌রোগে।’ রিয়াজুল আলম বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকেই (ছয় মাস) চিকিৎসক আরেফিনের আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ করে আসছি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। আর এখন করোনা নিয়ে মানসিক ভীতিতে ভুগছেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। এরপর করোনা নিয়ে নানা ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এগুলো সঠিক নয়।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক আজ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে পরিচয় গোপন করে অনেক প্রবাসী রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাঁদের চেনাও যায় না। আরেফিন ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছিলেন। তিনি যখন জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিপিই পোশাক সরবরাহ করেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন সব চিকিৎসককে চাপ প্রয়োগ করছে জরুরি বিভাগে রোগী দেখার জন্য।