ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি
পুলিশের গাফিলতি, চোরেরা অধরা
■ গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২০টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চুরি হয়েছে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে।
■ ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সূত্র না থাকলেও মিটারের ক্ষেত্রে মুঠোফোনের নম্বর থাকছে।
■ ৫ কেভি ট্রান্সফরমারের দাম ৩৫ হাজার আর ১০ কেভির দাম ৬৫ হাজার টাকা।
জয়পুরহাটে গত এক বছরে বিভিন্ন ফসলি মাঠ থেকে গভীর নলকূপের ১২০টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে আটকে রেখে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে বিপুল পরিমাণে।
অনেকেই মিটার রাখার স্থানে পাওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে মিটার ফেরত পেয়েছেন। আবার কেউ টাকা দিয়েও মিটার ফেরত পাননি। ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় কোনো সূত্র না থাকলেও থ্রি-ফেজের মিটার আটকে রাখার ক্ষেত্রে মুঠোফোনের নম্বর থাকছে।
এদিকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোরদের আটক ও চুরি যাওয়া একটি ট্রান্সফরমারও উদ্ধার করতে পারেনি। তবে আটক করা হয়েছে দু-একজন মিটার চোরকে। মুঠোফোন নম্বর থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তির সহায়তায় কেন মিটার আটকে রাখার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ধরা পড়ছে না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমিতি।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে গত এক বছরে গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার হিসাব থাকলেও গভীর নলকূপের থ্রি-ফেজ মিটার চুরির কোনো তথ্য নেই। তবে জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমবায় সমিতির শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, ওই সময়ের মধ্যে গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের চেয়ে মিটার জিম্মির ঘটনা দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২০টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে ২, এপ্রিলে ৩, জুনে ৫, জুলাইয়ে ১১, আগস্টে ১২, সেপ্টেম্বরে ১৬, অক্টোবরে ৩১, নভেম্বরে ২০ ও ডিসেম্বরে চুরি হয়েছে ১৪টি ট্রান্সফরমার। চুরি যাওয়া এসব বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ৫ ও ১০ দশ কেভি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, ৫ কেভি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের দাম ৩৫ হাজার টাকা আর ১০ কেভি ট্রান্সফরমারের দাম ৬৫ হাজার। প্রথমবার চুরির ঘটনা ঘটলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৫০ শতাংশ দামে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে। দ্বিতীয়বার চুরির ঘটনা ঘটলে পুরো টাকা গ্রাহককে বহন করতে হয়। ৫ কেভির একটি ট্রান্সফরমারে ১০-১২ কেজি আর ১০ কেভির ট্রান্সফরমারে ১৪-১৬ কেজি তামার তার থাকে। প্রতিটি ট্রান্সফরমার থেকে ১২–১৫ হাজার টাকার তামার তার বিক্রি হয়।
আক্কেলপুর উপজেলার চক রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক নীরেন্দ্র নাথ বলেন, তিনি একটি গভীর নলকূপের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন। গত বছর নলকূপের মিটার চুরি হয়। সেখানে সিগারেটের খালি প্যাকেটে একটি মুঠোফোন নম্বর পান। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে পাঁচ হাজার টাকা বিকাশে পাঠান। কিন্তু এরপর তাঁর কাছে আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়। না দেওয়ায় মিটার ফেরত পাননি।
নীরেন্দ্র নাথের ছেলে কাঞ্চন কুমার বলেন, মিটার চোরের সঙ্গে মুঠোফোনে তিনিও কথা বলেছেন। সেই কল রেকর্ড তাঁর কাছে সংরক্ষিত আছে। চোর তাঁকে বলেছেন, ‘নেতা-পুলিশ আমাদের পকেটে থাকে। কোথাও বলে লাভ হবে না।’
জয়পুরহাট জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, গত বছরে যে পরিমাণ ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে, এরও বেশি চুরি হয়েছে মিটার। মুঠোফোন নম্বর থাকার পরও কেন চোরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, তা বোধগম্য নয়। কার বিকাশ নম্বরে টাকা গেল, কার মুঠোফোনে কথা হলো তা প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।
জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির ক্ষেত্রে মামলা হলে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। তবে মিটার চোরদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।