পুলিশের ধাওয়ায় পালানোর পথে গাড়ি চাপা দিয়ে মারল দুই ছাত্রীকে
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ট্রাফিক পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় ধানবোঝাই একটি চাঁদের গাড়ি সড়কের পাশে দুই ছাত্রীকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হয়। আজ বুধবার দুপুর একটার দিকে উপজেলার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাইন্দং ইউনিয়নের পেলাগাজী মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই স্কুলছাত্রী হলো উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের হাইদচকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আবুল বশরের মেয়ে মিশু আকতার ও একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ লোকমানের মেয়ে নিশা মনি।
এ ঘটনায় আজ দুপুর দুইটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্টের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধরা। এ ছাড়া দুই পুলিশকে আটকে মারধর করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় শত শত গাড়ি আটকা পড়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
পরে ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), হাটহাজারী পুলিশ সার্কেলের এএসপি ও ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাস্থলে গিয়ে মাইকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
ফটিকছড়ি নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা তিনজন ট্রাফিক পুলিশ পাইন্দং ইউনিয়নের পেলাগাজীর দিঘির পাশে তল্লাশিচৌকি বসান। এ সময় বাজারের রাইস মিল থেকে ধান বহনকারী একটি চাঁদের গাড়িকে থামার সংকেত দিলে চালক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। গাড়িটি ধরতে পিছু নেয় ট্রাফিক পুলিশের টিআই নিখিল চাকমা ও সার্জেন্ট মুহাম্মদ আলামিন। এ সময় চাঁদের গাড়ির চালক দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথে সড়কের পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা দুই স্কুলছাত্রীকে চাপা দেয় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। আর গাড়িটি উল্টে গিয়ে দুমড়েমুচড়ে যায়।
এই সড়কের চালকদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশ তল্লাশিচৌকির নামে গাড়ি আটকে প্রতি গাড়ি থেকে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেন। চাহিদামতো চাঁদা না দিলে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে চাঁদের গাড়িটি পালানোর সময় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে তাদের ভাষ্য।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাবিল চৌধুরী বলেন, দুই ছাত্রীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়।
নিহত স্কুলছাত্রী মিশুর বাবা আবুল বশর বলেন, ‘আমাদের দুই মেয়েকে যাদের জন্য জীবন দিতে হয়েছে, তাদের বিচার করতে হবে।’ স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হাসেম বলেন, ‘দুজনই আমার ছাত্রী। তাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।’
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রবিউল হোসেন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। টিআই নিখিল জীবন চাকমাকে মারধর করেন বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।