পেকুয়ার ২৪ গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দী

নৌকায় মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ির বাসিন্দারা। রোববার বেলা সাড়ে তিনটায়।
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ২৪টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দী। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পানিবন্দী মানুষেরা। তাঁদের অভিযোগ, পানিনিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ করে ফেলায় এলাকা থেকে পানি নামছে না।

রোববার বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি এলাকার চলাচলের পথ এখনো পানির নিচে। সেখানকার বাসিন্দারা চলাচল করছেন নৌকায় চড়ে। পাশের নন্দীরপাড়ার অবস্থাও একই। নন্দীরপাড়া বাসিন্দা মো. শাহনেওয়াজ (৪৫) পেকুয়া বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলেন। নুইন্যামুইন্যা ব্রিজ এলাকায় পৌঁছে কাপড় বদলে ছোট প্যান্ট পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মাথায় নিয়ে ঘরের উদ্দেশে রওনা হন।

শাহনেওয়াজ বলেন, নন্দীরপাড়ার সড়কটি ২৫ জুলাই থেকে বুকসমান পানিতে ডুবে আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য চারটি নৌকা আছে। এখন নৌকা না থাকায় একপ্রকার সাঁতরে ঘরে যেতে হবে।

শুধু সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি ও নন্দীরপাড়া নয়, বলিরপাড়া, মোরারপাড়া, বাজারপাড়া, চৈরভাঙা, সৈকতপাড়া, দক্ষিণ মেহেরনামা, পূর্ব মেহেরনামা, সরকারি ঘোনা, টেকপাড়া, মইয়াদিয়া, ছিরাদিয়া ও মগকাটা এলাকায় এখনো হাঁটুসমান পানি। স্থানীয় বাসিন্দারা বসতঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে থাকা স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন। স্থানীয় লোকজন বলেন, নন্দীরপাড়া ও ছিরাদিয়া এলাকার কয়েকটি স্লুইসগেটে (জলকপাট) জাল বসানোর কারণে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না।

পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব মোহম্মদ মহসীন বলেন, বন্যায় প্লাবিত এলাকার ১ হাজার ৪৩২ জনকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। সোমবার এক হাজার ১৫০ জনকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। তিনি বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় ও নদীতে জোয়ার থাকায় পানি নামতে একটু সময় নিচ্ছে।

এদিকে রোববার বিকেল চারটায় দেখা যায়, বারবাকিয়া ইউনিয়নের ভারুয়াখালী, নাজিরপাড়া, বাজার পাড়া ও পাহাড়িয়াখালী এলাকায় বন্যার পানি। শিলখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কাছারীমোড়া, সিকদারঘোনা ও পূর্ব ভারুয়াখালীর একাংশ এলাকায় অন্তত ৪৬টি বসতঘরেও পানি। শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন বলেন, বারবাকিয়া-শিলখালী সীমান্ত এলাকায় একটি স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় পানিনিষ্কাশন হতে পারছে না।

উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ার চর, নতুন ঘোনা ও ষাটদুনিয়া পাড়া এলাকায় এখনো বন্যার পানি নামেনি। ওই এলাকার তিনটি স্লুইসগেটের দুটি দখল হয়ে যাওয়ায় পানি অনেক দেরিতে নামছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোতাছেম বিল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এলাকার স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। কিছু স্লুইসগেট আগে থেকে দখল করে রাখায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুত পানি নামার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে পুলিশ পাঠিয়ে স্লুইসগেট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।