পেট্রল ঢেলে নারীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২

নরসিংদীর রায়পুরায় এক নারীকে (৩০) ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ রোববার তাঁর ভাই চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা ওই নারীর সাবেক স্বামীর স্বজন।

দগ্ধ পারভীন আক্তার রায়পুরার মরজালের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের সাবেক স্ত্রী। আট মাস আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে পারভীন বাবার বাড়িতে থাকতেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন, জাকির হোসেনের ভাই আলী হোসেন (৩২) এবং ভাগনে মো. শাহরিয়ার (১৮)।

বর্তমানে পারভীন আক্তার ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

পুলিশ ও পারভীনের স্বজনেরা জানান, টিকা নিয়ে দেওয়ার কথা বলে গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন সাবেক শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সন্ধ্যার পর তাঁর মুখ বেঁধে রায়পুরার লোচনপুর এলাকার একটি নির্জন স্থানে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনে সেখানে গিয়ে তাঁকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। রাত ১০টায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে রাজধানী ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। তাঁর স্বজনদের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

রায়পুরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ‘ওই নারীকে রাত ১০টার দিকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। তাঁর শরীরের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠিয়েছি। তাঁর সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, তা হাসপাতালে আসা পুলিশের কাছে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তিনি।’

এ ঘটনায় আজ রোববার পারভীন আক্তারের ছোটভাই আক্রাম হোসেন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেন। তিনি জানান, এক বছর আগে মেয়ের পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার অভিযোগে দেবরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পারভিন। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিলেন তিনি। আট আস আগে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন। সেই থেকে বাপের বাড়িতেই ছিলেন। সম্প্রতি সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার কথা বলে আসছিলেন পারভীনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গতকাল দুপুরে টিকা নেওয়ার কথা বলে তাঁকে ডেকে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পারভীনের সাবেক শাশুড়ি হাজেরা বেগম বলেন, ‘তাঁর (পারভীন) সঙ্গে আমার ছেলের আগেই ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল, আমরা এর কিছুই জানি না। আমার ছেলে ও নাতিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।’

রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবদুলাল দে বলেন, গতকাল রাত একটার দিকে ওই নারীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।