কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকার বাসিন্দা পরিবহন ব্যবসায়ী আবুল মোল্লা। গত ২৯ মার্চ মধ্যরাতে হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। জেগে দেখেন বিদ্যুৎ চলে গেছে, পাখা ঘুরছে না। এক ঘণ্টা যায়, দুই ঘণ্টা যায়, বিদ্যুতের আর দেখা নেই। সকালে দেখেন ঘরের ওপর সার্ভিস তারের (বিদ্যুতের খুঁটি থেকে মিটার পর্যন্ত সংযোগ) কাটা অংশ ঝুলছে।
বুঝতে আর বাকি রইল না তার চুরি গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জানতে পারেন, ওই রাতে তাঁদের পাড়ার আরও চারটি পরিবারের তার চুরি গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরবে এক মাস আগে থেকে সার্ভিস তার চুরির ঘটনা শুরু হয়। দিন দিন চুরির সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহে অন্তত ৫০টি চুরির খবর পাওয়া গেছে। আবাসিকের পাশাপাশি কারখানার সংযোগও রয়েছে। তার খোয়া যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় অনেকে এখন সতর্ক রাত যাপন করছেন। নিজেদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারেননি পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ বা জনপ্রতিনিধিরা।
ক্ষোভ নিয়ে আবুল মোল্লা বলেন, তার চুরির বিপদ দুই ধরনের। প্রথমত, অর্থনৈতিক। দ্বিতীয়ত, জীবনের ঝুঁকি। চোরেরা চুরি শেষে তারের একাংশ ঝুলিয়ে রেখে যায়, যা থেকে যে কেউ বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যেতে পারে।
এক সপ্তাহের মধ্যে পৌর শহরের ভৈরবপুর ও গাছতলাঘাট এলাকার ১৪ জন গ্রাহকের তার চুরির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ওষুধ ব্যবসায়ী আর্থ কিশোর, শিক্ষক প্রফুল্ল চন্দ্র, নাজির উদ্দিন, আল আমিন মিয়া, সাইদুর মিয়া, মাসুদ মিয়া, তাইব উদ্দিন মিয়ার বাড়ি ও রহমত আলীর রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। আর্থ কিশোর বলেন, ‘সমাধান পেতে বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি। “আমরা কী করতে পারি”, এমন উত্তর পেয়েছি।’
পুলিশ ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইদানীং বাজারে তামার মূল্য বেড়েছে। চুরি করে আনা তারের খোলস ছাড়িয়ে তামা বের করে আনা হয়। ওই তামার বাজারমূল্য ভালো। এ জন্যই চক্রটি তার চুরিতে মনোযোগ বাড়িয়েছে। চোর চক্রের মধ্যে বিদ্যুতের কাজ জানে, এমন সদস্য আছে। মাদকাসক্তরা চক্রের সদস্য হতে পারে।
দুই দিন আগে পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী মিজান পাটোয়ারীর বাড়ির তার চুরি যায়। একই রাতে ওই এলাকার
আরও পাঁচ বাড়িতে হানা দেয় চোর চক্র। মিজান পাটোয়ারী বলেন, সাত হাজার টাকার তার কিনে সংযোগ চালু করতে হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ চলে গেলে চুরির ভয় কাজ করে।
ভৈরব বাজার এলাকা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে চারটি চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কাঠবাজার এলাকার শাহিন মিয়ার স মিল ও দুধবাজার এলাকার হারুন মিয়ার বাড়ির তার কাটা গেছে। হারুন বলেন, চোরেরা তারের অর্ধেক কেটে নিয়েছে। বাকি অর্ধেক মাটিতে পড়ে ছিল। কেউ স্পর্শ করলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারত। এরপর থেকে তারের চেয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয় বেশি কাজ করে।
এলাকাটি পিডিবির ফিডার-১ এর আওতাভুক্ত। ঘন ঘন তার চুরির অভিযোগ পাওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করে নেন ওই ফিডারের উপসহকারী প্রকৌশলী শামিম আকন্দ। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ খুবই চিন্তিত। যেসব এলাকায় সিসি ক্যামেরা যুক্ত আছে, ওইসব এলাকার ঘটনাগুলো শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এখন পর্যন্ত ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তার চুরির ঘটনা বেশি। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, ডিশ ও ওয়াইফাই লাইনম্যানরা রাতেও লাইনে কাজ করেন। চক্রটি চুরির ক্ষেত্রে ডিশ ও ওয়াইফাই লাইনম্যানের পরিচয় কাজে লাগাতে পারে। সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
ভৈরব আবাসিক বিদ্যুৎ সরবরাহকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাঁরা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিষয়টি জানা আছে উল্লেখ করে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম মস্তুফা গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, কিছু চোরাই তার উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি চোর চক্র চিহ্নিত হয়েছে। এসব চক্রের সদস্যদের ধরার চেষ্টা চলছে।