প্রতিবেশীর সন্তানের লাশ বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাবা জানলেন তাঁর ছেলেও নিখোঁজ
নদে গোসল করতে নেমে হইহুল্লোড়ের মধ্যে দুটি শিশু তলিয়ে যায়। এ খবর শুনে ইউসুফ আলী নামের এক ব্যক্তি নদে ঝাঁপ দেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেন তিনি। লাশটি ওই শিশুর বাড়িতে পৌঁছে দেন। এরপর নিজের বাড়িতে এসে শোনেন, তাঁর ছেলে সিয়ামও বাড়ি নেই। সে নদে গোসল করতে গেছে। নদীতে আবার ঝাঁপ দেন ইউসুফ। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী খোঁজাখুঁজির পর নদ থেকে সিয়ামের লাশও উদ্ধার করেন তিনি। নিঃস্ব, রিক্ত বাবা ইউসুফ এবার বাড়ি ফেরেন নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের কহরপাড়া গ্রামে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গন নদে গোসল করতে নেমে শ্যালো মেশিনে বালু উত্তোলনের গর্তে পড়ে শিশু দুটির মৃত্যু হয়। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন নারগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম।
মারা যাওয়া শিশু দুটি হলো কহরপাড়া গ্রামের কেরানি মার্কেট এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে সিয়াম (৮) ও একই গ্রামের মনসুর আলীর ছেলে মাসুম বিল্লাহ (১২)। সিয়াম স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ও মাসুম বিল্লাহ উত্তর কহরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে সিয়াম, মাসুমসহ এলাকার চার শিশু-কিশোর নারগুন এলাকার টাঙ্গন নদে একসঙ্গে গোসল করতে নামে। গোসলের একপর্যায়ে প্রবল স্রোতে সিয়াম ও মাসুম তলিয়ে যেতে শুরু করে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা অন্যরা চিৎকার শুরু করে। এতে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাদের খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা–পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলে বিকেল চারটার দিকে নদের বালু তোলার গর্ত থেকে মাসুমের লাশ উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর স্থানীয় ইউসুফ আলী শিশুটির লাশ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তিনি নিজের বাড়ি ফিরে জানতে পারেন তাঁর ছেলে সিয়ামও বাড়িতে নেই। নদে ফিরে এসে স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে ছেলের লাশ খুঁজতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে নদের গর্ত থেকে সিয়ামের লাশও উদ্ধার করেন তিনি।
ইউসুফ আলী বলেন, ‘মাসুমের লাশ উদ্ধারের সময় বুঝতেই পারিনি এই নদের বালুর গর্তে আমার ছেলের লাশও লুকিয়ে আছে।’
কহরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে টাঙ্গন নদে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হয়েছে। এতে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গভীর গর্তে পড়ে সিয়াম ও মাসুম আর উঠতে পারেনি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউপি চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, নদে গোসল করতে নেমে বালু তোলার কারণে হওয়া গর্তে পড়ে এ ঘটনাটি ঘটেছে। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।