দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সি-ট্রাক চলাচলের মধ্য দিয়ে বগুড়া-জামালপুর নৌপথে যমুনা নদীতে ফেরিসেবা চালু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল ঘাটে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে সারিয়াকান্দির জামথল ও কালীতলা নৌঘাটে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি দলীয় সভার আয়োজন করা হয়। ব্যানারে ‘মতবিনিময় সভা’ লেখা হলেও দুটি সভা ‘জনসভায়’ রূপ নেয়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সেখানে যোগ দিয়েছেন। গাদাগাদি করে দলীয় সভায় অংশ নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সারিয়াকান্দির জামথল ঘাটে ফেরিসেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামালপুর-৩ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদিক প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বগুড়া-১ আসনের সাংসদ সাহাদারা মান্নান।
বিআইডব্লিউটিএ পরিচালিত ‘শহীদ আবদুর রউফ সেরনিয়াবাত’ নামে অত্যাধুনিক সি-ট্রাকটি উদ্বোধনের পরপরই দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে জামথল ঘাট থেকে নদী পাড়ি দিয়ে কালীতলা ঘাটে এসে পৌঁছায়।
সারিয়াকান্দির মানুষ এতটাই উচ্ছ্বসিত, ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার আনন্দে নিজে থেকেই মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন জানাতে দলে দলে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌপথের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। কালীতলা থেকে জামথল পর্যন্ত নদী পারাপারে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। প্রতিদিন আপাতত তিনবার করে চলাচল করবে এ নৌযান। যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা। জামথল ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ উপজেলা সদরের দূরত্ব সাত-আট কিলোমিটার।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ নৌযানে অতিথিরা যমুনা নদী পার হয়ে দুপুরে সারিয়াকান্দি সদরের কালীতলা ঘাটে পৌঁছান। সেখানে কালীতলা গ্রোয়েন বাঁধে নির্মিত মঞ্চে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন তাঁরা। বেলা দুইটার দিকে এই মতবিনিময় সভায় অতিথিরা যোগদানের আগেই সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মীরা দল বেঁধে মিছিল নিয়ে সভায় যোগ দেন। অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও তা ঠিকভাবে পরা ছিল না। হাজারো নেতা-কর্মী গাদাগাদি করে যোগ দেন সভায়। ফেরি সার্ভিস চালু উপলক্ষে যমুনার দুই পারের মানুষের মধ্যে ছিল খুশির উচ্ছ্বাস।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদীশাসন ও নদী ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নান্দনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ চলছে। যমুনা করিডর প্রকল্প ছাড়াও সারা দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন নৌপথ এবং পায়রা নেভি বেস তৈরি হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ নৌপথে নদী পারাপারে এত দিন ভরসা ছিল ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হতো। ভাড়াও গুনতে হতো কয়েক গুণ। এখন ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় ভোগান্তি কমবে। অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। বগুড়া থেকে ঢাকা পথে দূরত্ব কমবে ৮০ কিলোমিটার।
মতবিনিময় সভায় লোকসমাগমের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া-১ আসনের সাংসদ সাহাদারা মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, যমুনায় ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন উপলক্ষে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। মুখে মাস্ক পরেই নেতা-কর্মীরা এই সভায় যোগ দিয়েছেন।
সাংসদ আরও বলেন, ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের খবরে যমুনার পারে রীতিমতো খুশির বন্যা বইছে। সারিয়াকান্দির মানুষ এতটাই উচ্ছ্বসিত, ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার আনন্দে নিজে থেকেই মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন জানাতে দলে দলে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা অন্যভাবে নেওয়ার কিছু নেই।