‘প্রতীকী নয়, আসল কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নামতে হবে’

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সমাবেশ। টুকেরবাজার, সিলেট, ১২ জানুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে প্রতীকী নয়, আসল কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নামতে হবে। রাজপথ প্রকম্পিত করতে হবে। গুলি খেতে হবে। সব জেলের তালা ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে ও দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

সিলেট জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরতলির টুকেরবাজারে আজ বুধবার বেলা দুইটা থেকে শুরু হওয়া খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ এসব কথা বলেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া মানুষের কথা বলেন, এ জন্যই তাঁকে কারাগারে স্লো পয়জন দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাই রাজপথকে প্রকম্পিত করে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করতে হবে। খালেদা জিয়া মুক্তির আন্দোলনে যদি দেশের মানুষের গুলি আমার শরীরে লাগে, তবে আমি গর্বিত একজন নিহত মানুষ হব।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। আরও বক্তব্য দেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালি প্রমুখ।

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মা, গণতন্ত্রের কাণ্ডারি খালেদা জিয়া জনগণের ভাষা বোঝেন। তিনি আজ পর্যন্ত যত জায়গা থেকে নির্বাচন করেছেন, সবগুলোতে জয়লাভ করেছেন। খালেদা জিয়াকে যিনি বন্দী করে রেখেছেন, তিনি নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকা ও মেজর মান্নানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। পরাজিত হওয়ার পরে তিনি আর ঢাকায় নির্বাচন করেননি।

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়া জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে সংসদীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছেন। তিনি কেয়াটেকার সরকার দিয়েছিলেন এবং এরপরের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তিনি বিরোধী দলের নেত্রী হয়েছিলেন। তিনি চাইলে আন্দোলন দমন করে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ, তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।

ইকবাল হাসান মাহমুদ আরও বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রথম আক্রমণ করেছিল। সেদিন রাত তিনটা পর্যন্ত পুলিশ বাহিনী তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছিল। সে যুদ্ধে আমিও অংশ নিয়েছিলাম। ২৬ তারিখে কারফিউ ছিল ঢাকা শহরে। কারও কোনো খবর ছিল না। ২৭ তারিখ কিছুক্ষণের জন্য কারফিউ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানুষ জানে না কোথায় যাবে। যাদের দেশের মানুষ মুক্তির জন্য ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল, তারা নেড়ি কুকুরের মতো লেঙ্গুর গুটিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিল। দেশের সাত কোটি মানুষকে হায়েনাদের মুখে ঠেলে দিয়ে ভারতে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিল তারা। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমাদের ইলিয়াস আলী এখনো গুম রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী জানে না, তিনি সধবা না বিধবা। তাঁর সন্তানেরা জানেন না, তাঁদের বাবা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। এ ছাড়া দলের আরও অনেকে গুম রয়েছেন।’

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার জনগণকে বারবার ভোটে নির্বাচিত বলে দাবি করলেও জনগণ বোঝে পুলিশ বাহিনী এখন সরকারের ভোট কাটে। এর থেকে উত্তরণের জন্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনকে মুক্তি করতে রাজপথে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তাঁরা।
বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশে সকাল থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিলসহ সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় সমাবেশের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। সমাবেশস্থলের পাশেই বিপুল পরিমাণ পুলিশ অবস্থান করতে দেখা গেছে।