প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে মুখে হাসি ফুটল তাঁদের
উমর আলীর বয়স ৫৫ বছর। বছর ১৬ আগেও হাঁটাচলা করতে পারতেন তিনি। তবে পাথরশ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় একটি পা হারান। অন্য পায়ের তিনটি আঙুল হারিয়েছেন, এ কারণে চলাফেরা করতে পারেন না। হুইলচেয়ারই তাই ভরসা। জীবনসংগ্রামে অনন্যোপায় উমর লোকজন সাহায্য করলে যা পান, তা দিয়েই সংসার চালান। প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর একটি প্যাকেট পেয়ে হাসি ফুটে ওঠে উমর আলীর মুখে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের টুকেরগাঁও গ্রামের এই বাসিন্দা বলেন, এখন আর চারজনের সংসারে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন চলতে কোনো চিন্তা থাকবে না। কদিন মানুষের কাছে হাতও পাততে হবে না।
আজ সোমবার বেলা একটার দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার থানাবাজার এলাকায় অবস্থিত কোম্পানীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উমর আলীর মতো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার ১০০ জন বাসিন্দার মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণের প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ।
ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে আয়োজিত একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি মানাউবী সিংহের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী, কোম্পানীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমির হোসেন, পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কান্তি দাশ, কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা।
ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, প্রথম আলো সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করে। পত্রিকাটি শুধু সংবাদ প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তারা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের সহায়তা করে যাচ্ছে। সিলেটে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ঘুরে ঘুরে সহায়তা করছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য আইডিএলসি ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রথম আলো শুধু সংবাদ প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তারা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের সহায়তা করে যাচ্ছেসিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী
ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বেলাল আহমদ (৪০) নামের একজন প্রতিবন্ধী বলেন, তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। হুইলচেয়ারে করে মানুষের কাছে গিয়ে সাহায্য চান তিনি। সে টাকাতেই চলে সংসার। এর মধ্যে বন্যায় ঘরে কোমরসমান পানি ছিল। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছিল। বন্যার পানি নেমে গেলেও বৃষ্টির কারণে বাইরে যেতে পারেন না। সে জন্য সংসার চালাতে খুব বেকায়দায় পড়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণসহায়তা পাওয়ায় সংসার সপ্তাহখানেক নিশ্চিন্তে চলবে।
ইসলামপুর গ্রামের রেজিয়া বেগম (৬৫) জন্মের পর থেকে চোখে দেখেন না। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১২ বছর আগে। এরপর বড় দুই ছেলে সংসার চালালেও তিন বছর ধরে ছোট ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকেন তিনি। তিনি বলেন, ছোট ছেলে আগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাত। করোনার সময় বাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। সে সময় অটোরিকশাটি বিক্রি করে সংসারে খরচ চালাতে হয়েছে। এখন ছেলে বেকার হয়ে বাড়িতে বসে থাকে। রেজিয়া সাহায্য-সহযোগিতা যা পান, তা দিয়েই সংসার চলে। সোমবার পাওয়া ত্রাণ দিয়ে ১৫ দিন চলবে বলে মনে করেন তিনি।
ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল খালিক, কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় সংবাদকর্মী আনোয়ার সুমন, কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা হোসাইন আহমদ, সোহেল আহমদ, প্রথম আলো সিলেট কার্যালয়ের আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ, প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি হুমাইরা জাকিয়া, ম্যাগাজিন সম্পাদক গায়ত্রী বর্মন, প্রচার সম্পাদক রেজবী সিদ্দিকা, সদস্য মিফতা হাসান, মো. আবদুল মুহাইমিন চৌধুরী প্রমুখ।
বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।