প্রথম বছরেই ভালো ফলন, সন্তুষ্ট কৃষক

এই শর্ষেয় দেশি শর্ষের মতো ঝাঁজ নেই। কারণ, এই জাতের শর্ষের তেলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক কম।

এক বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো বারি-১৮ জাতের শর্ষে লাগিয়েছেন সাইদ মোল্লা। ফলন দেখে তিনি নিজেই অবাক। সম্প্রতি তাঁর খেতে
ছবি: প্রথম আলো

নিজের ৩৩ শতক (এক বিঘা) জমিতে প্রথমবারের মতো বারি-১৮ জাতের শর্ষে চাষ করেছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মো. সাইদ মোল্লা। ফলন দেখে অবাক তিনি। শর্ষের ফলন যে এত বেশি হতে পারে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদের জন্য নতুন ওই জাতের শর্ষেবীজ সরবরাহ করেছিল ডুমুরিয়া কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়।

কৃষক সাইদ মোল্লা বলেন, ‘গত বছর একই জমিতে বারি-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করেছিলাম। ওই জাতের ফলন ভালো হয়েছিল। এরপর ঠিক করেছিলাম প্রতিবছর ওই জাতের শর্ষে চাষ করব। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে যখন নতুন এই জাতের (বারি-১৮) শর্ষের বীজ লাগানোর জন্য দেওয়া হলো, তখন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কেমন ফলন হয়, এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের পরও তা বপন করি। দেড় মাসের মধ্যেই গাছের বৃদ্ধি আর ফল আসার ধরন দেখে অবাক হয়ে যাই। আসলে এত ফলন হতে পারে, তা কল্পনাও করিনি।’

গত বছর এক বিঘা জমি থেকে পাঁচ মণের মতো শর্ষে পেয়েছিলেন সাইদ মোল্লা। এবার একই জমি থেকে কমপক্ষে ৯ মণ শর্ষে পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উপকূলীয় এলাকায় চাষের জন্য খুবই উপযোগী এই জাতের শর্ষে। এসব এলাকায় মাটি চাষাবাদের উপযোগী হতে কিছুটা দেরি হয়। তবে এই জাতের শর্ষে জমি চাষ না করেই জমিতে বপন করা যায়। ফলে বপন করা যায় আমন ধান না কেটেই। ধান কাটতে কাটতেই শর্ষের চারা গজিয়ে যায়। অন্যদিকে ফলনও হয় প্রায় দ্বিগুণ। সার-কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রাও অনেক কম। কৃষক চাইলে শর্ষে তুলেই বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই শর্ষেয় দেশি শর্ষের মতো ঝাঁজ নেই। কারণ, এই জাতের শর্ষের তেলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক কম।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়া কৃষি কার্যালয় থেকে প্রতিবছর কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও সারসহায়তা দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ২৫ জন কৃষককে ২৫ কেজি বারি-১৮ জাতের শর্ষের বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল। প্রায় দ্বিগুণ ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বটিয়াঘাটা উপজেলাতেও এবার প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ওই জাতের শর্ষে চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদের বীজ দিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়। ওই বীজ নিয়ে জলমা ইউনিয়নের সুড়খালী গ্রামে এক বিঘা জমিতে শর্ষে চাষ করেছেন মো. খোরশেদ শেখ। তিনি বলেন, দুই বছর আগে শর্ষে চাষ করেছিলেন। গত বছর বাদ দিয়ে এবার আবার শুরু করেছেন। বিরূপ আবহাওয়ায় মসুর, খেসারি ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও শর্ষের খেত টিকে আছে। ফলন অত্যন্ত ভালো।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকার জন্য শর্ষের এই জাত খুবই সম্ভাবনাময়। ফলন বেশি, চাষাবাদের ঝামেলাও কম। এটি চাষ করে শর্ষে তেলের ঘাটতি অনেকটা কমিয়ে আনা যাবে।