প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
ভোকেশনাল শাখার এমপিওভুক্ত ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর হয়েও জেনারেল শাখার প্রধান শিক্ষক তিনি। অবশ্য বেতন তোলেন ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর পদের। নিয়মবহির্ভূতভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি হিসেবে সই করেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে। ঢাকার ধামরাই উপজেলার ধামরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে যোগ দেওয়া উম্মে হাবিবা বেগমকে ২০১৪ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণে নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে হয়। সেই নিয়ম মানা হয়নি।
উম্মে হাবিবার দাবি, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়। নিয়ম মেনে ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হন তিনি।
২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৬ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ গেজেটে ট্রেড ইনস্ট্রাক্টরের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে আছে ‘ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডিপ্লোমা ইন ভোকেশনাল এডুকেশন বা তার সমমানসহ সব পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ। গেজেট অনুযায়ী উম্মে হাবিবার এসব ডিগ্রি নেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবরের নীতিমালা অনুযায়ী ইনস্ট্রাক্টর পদে তাঁর কোনো ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ না থাকায় তিনি সরকারি বেতন-ভাতা পাবেন না এবং ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তাঁর বেতন-ভাতার ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ২১৯ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে তিনি (উম্মে হাবিবা) ট্রেড শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভের অনুপযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখা থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উম্মে হাবিবার নিয়োগ বাতিলসংক্রান্ত চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়। পত্রে নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় কেন তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হবে না, এ বিষয়ে তাঁর জবাব দাখিলের জন্য বলা হয়।
জানতে চাইলে উম্মে হাবিবা বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে জমা দিয়েছি। আমার নিয়োগ তাঁদের কাছে সঠিক মনে হওয়ায় এ বিষয়ে পরে আর কিছু হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের বৈধতার বিষয়ে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।