প্রবেশপথে কড়াকড়ি, এপারে এসে ট্রাকে থাকছেন না চালকেরা

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের শূন্যরেখার সড়কে ভারতীয় যানবাহন প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে
ছবি: প্রথম আলো

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকলেও লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে চালকেরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তবে এপারে এসে ট্রাকচালকদের ট্রাকেই থাকার নির্দেশনা থাকলেও তাঁরা বাইরে ঘোরাঘুরি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য বন্দরের মতো গতকাল সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে চালু রয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ভারত থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে দুই শতাধিক ট্রাক ঢুকছে বাংলাদেশে। এ সময় রপ্তানিযোগ্য পণ্য নিয়ে ৬৫ বাংলাদেশি ট্রাক প্রবেশে করেছে ভারতের ওপারে চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে।

আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরে আন্তর্জাতিক অভিবাসনচৌকির (আইসিপি) শূন্যরেখায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ওপারে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। ভারতীয় পণ্যবোঝাই মালামাল নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে। এ সময় ভারতীয় চালকদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পড়া ছিল। তা ছাড়া শূন্যরেখার সড়কে দুই পাশে দুই ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে যানবাহনগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে। চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন স্বাস্থ্য সহকারী ভারতীয় ট্রাকচালকদের প্রাথমিকভাবে হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।

তবে অভিযোগ রয়েছে স্থলবন্দরে ভারতীয় পাথরবোঝাই ট্রাক নিয়ে প্রবেশ করার পর ট্রাকগুলো আবার স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও স্থলবন্দর কাস্টমসের ছাড়পত্র নিয়ে বুড়িমারী বাজারের বিভিন্ন পাথরের মাঠে (সাইট) গিয়ে পাথর আনলোড (নামানো) করছেন। এতে ভারতীয় ট্রাকচালক স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তাঁদের ট্রাকের কেবিনে থাকার কথা। কিন্তু তাঁরা বাইরে নেমে ঘোরাঘুরি করছেন। এতে স্থানীয় পাথরশ্রমিকসহ ব্যবসায়ীরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ সময় ভারতের আসাম থেকে আসা ট্রাকচালক আইজুউদ্দীন (৬৫) বলেন, তাঁদের দেশেও পরীক্ষা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বাংলাদেশেও শরীরের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করেছেন।

স্থলবন্দর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বুড়িমারী বাজারের বিভিন্ন পাথরের মাঠে গিয়ে পাথর আনলোড করা হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ৩০৫টি ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকেছে। এসব ট্রাকের সঙ্গে শুধু চালক প্রবেশ করেছেন। এদিন বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ৬৫ ট্রাক রপ্তানি রয়েছে। এসব ট্রাকের মালামাল নামিয়ে দিয়ে তাঁদের অধিকাংশ আবার ফিরেও যাচ্ছেন।

বুড়িমারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক অভিবাসনচৌকির শূন্যরেখায় বিজিবি ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা করা হয়। এতে বুড়িমারী স্থলবন্দর ও ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী, উভয় দেশের কাস্টমস কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্থলবন্দর অভিবাসন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা করে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকবে। তা ছাড়া সভায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে উভয় দেশের বন্দর ব্যবহার ও ব্যবসা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বন্দর ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবানপানির ব্যবস্থা থাকবে। মালামাল খালাসের সময় ভারতীয় ট্রাকচালকেরা ট্রাকের কেবিনেই অবস্থান করবেন বলে সিন্ধান্ত হয়।