অভিনব কায়দায় রাজশাহীতে ভূমি অফিসের কর্মচারীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা হচ্ছে। দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়। এমন ঘটনার ভুক্তভোগী এক তহশিলদারকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলেছেন তানোর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
ভুক্তভোগী কয়েক তহশিলদার জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ০১৩১৭-০০৬৯৬৬ ও ০১৭৭৭-৪৯৭৭০৪ নম্বর দুটি থেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। নম্বর দুটির যেকোনো একটি থেকে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে কল করা হয়। ফোনের অপর পাশ থেকে পুলিশ বা দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কথা বলবেন, এমনটা জানিয়ে তহশিলদারদের চাওয়া হয়।
তহশিলদারেরা জানিয়েছেন, প্রতারণার কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যানরা মুঠোফোন নম্বরটিতে (প্রতারকের) কল করতে বলেন। তখন ফোনের অপর পাশ থেকে পরিচয় হিসেবে পুলিশ সুপার (এসপি) শহীদুল, আবার কখনো দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নাম বলা হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চারঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের একজন কর্মচারী এমন প্রতারণার শিকার হন।
দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি এ অভিযোগ পেয়েছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁরা এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছেন।
এদিকে প্রতারণার এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ফোন ট্র্যাকিং শুরু করে রাজশাহীর পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, মুঠোফোন নম্বর দুটির অবস্থান ফরিদপুরে বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন।
তহশিলদারদের প্রতারণার শিকার হওয়ার একটি ঘটনা ঘটে তানোর উপজেলার কামারগাঁওয়ে। সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিনকে কল করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারকে ফোন করার জন্য বলা হয়। তহশিলদার ফোন করলে তাঁকে এসপি শহীদুলের পরিচয় দেওয়া হয়। এসপি সেজে ওই কর্মচারীকে ধমক দেওয়া হয়। চাকরি বাঁচাতে হলে তাঁদের বিকাশ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। ভয় পেয়ে ওই কর্মচারী বিকাশে টাকা পাঠান।
যোগাযোগ করা হলে মোসলেম উদ্দিন এই প্রতারণার কথা স্বীকার করে গতকাল বলেন, পরিচয় শুনে বিশ্বাস করে তিনি তহশিলদারকে কল করতে বলেন। তহশিলদার টাকা দিয়েছেন কি না, তা তিনি জানেন না। একই উপজেলার কলমা ইউপির চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম বলেন, তাঁকেও এসপি ও দুদকের সহকারী পরিচালকের কথা বলে কল করা হয়েছিল। তিনিও ভূমি অফিসের কর্মচারীদের কল করতে বলেছেন।
গতকাল বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখার সময় ফোন নম্বর দুটি চালু ছিল। তবে কল করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকেও নম্বর দুটিতে কল করা হচ্ছে। কেউ ধরছে না। তবে অবস্থান ফরিদপুর জেলায় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর শহীদুল ইসলাম নামে রাজশাহী রেঞ্জে কোনো এসপি নেই।