ফসলহানি ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম তদন্তে হাওর পরিদর্শনে মন্ত্রণালয়ের কমিটি
সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা তদন্তে হাওর পরিদর্শনে নেমেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরিন এবং কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথমে জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওরে যান। তাঁরা ওই হাওরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখেন। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিনহা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান, পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী এনায়েত উল্লাহ, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোবাসশেরুল ইসলাম; সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, ধর্মপাশার পর তদন্ত দল জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি এলাকা পরিদর্শনে যাবে। এই নজরখালি এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে ২ এপ্রিল প্রথমে ফসলহানি ঘটে।
গত ৩০ মার্চ থেকে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জি থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার সব হাওরের বোরো ফসল। ২ এপ্রিল প্রথমে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। এরপর একে একে ছোট–বড় আরও ১০টি হাওরের ফসলহানি ঘটেছে। তবে জেলার বড় বড় হাওরগুলোর ফসলের এখনো ক্ষতি হয়নি।
তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের করা কমিটি
এদিকে ফসলহানি এবং বাঁধ নির্মাণে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গঠিত জেলা প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের কমিটিও কাজ শুরু করেছে। গত রোববার সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও হাওরে বাঁধ নির্মাণ-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এই তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। কমিটি ২৫ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হাওরের ফসল রক্ষায় দিনরাত কাজ করছি। এটা অন্যরকম এক যুদ্ধ বলা চলে। মাঝখানে পানি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এখন আবার বাড়ছে, তাতে আমরা আতঙ্কিত। অনেক স্থানে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবার ঢল এলে, পানির চাপ আরও বাড়লে, বাঁধগুলো ঠেকানো মুশকিল হবে।’
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এবার সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ মেট্রিক টন। এবারের ঢলে জেলার বিভিন্ন হাওরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে ধান কাটার মেশিনও আছে। মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। আর যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তাহলে কৃষকেরা তাঁদের ফসল গোলায় তুলতে পারবেন।