রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরআফড়া গ্রামে ফসলি জমি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে জমি পতিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

মাটি তোলার কারণে ওই এলাকার গতমপুর সেতু ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রাক থেকে রাস্তায় মাটি পড়ে চলাচলের ক্ষেত্রেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

চরআফড়া গ্রামের গতমপুর বাজারে সেতুটির অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, সেতু থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ফসলি জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সেখানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মাটি তোলার ফলে আশপাশের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমি থেকে ট্রাকে করে মাটি নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ট্রাকগুলো যখন রাস্তা দিয়ে যায়, তখন চারদিকে ধুলাবালু ছড়িয়ে পড়ে। আবার ট্রাক থেকে রাস্তায় মাটি পড়ে একটি আস্তরণ তৈরি হয়েছে। মাটিবোঝাই যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তমিজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা সবাই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এ কারণে কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

চরআফড়া গ্রামের বাসিন্দা তমিজ উদ্দিন মাটি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘যেখান থেকে মাটি তোলা হচ্ছে, সেখানে ধান চাষ হতো। বন্যার পানি আসায় ওপরে বালু পড়েছে। এ কারণে জমিতে ফসল হয় না। সেখানে আমাদের কয়েকজনের জমি আছে। সেখান থেকেই মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করছি। তবে বর্ষায় পলি এসে জমি আবার আগের মতো হয়ে যায়। আর গর্ত ভরাট না হওয়া পর্যন্ত সেখানে মাছ চাষ করা হয়।’

তবে মাটি তোলার কারণে গতমপুর সেতু ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, এভাবে সেতুর কাছ থেকে মাটি তোলার ফলে সেতু ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আবার আশপাশের অনেক জমি হুমকিতে পড়েছে। প্রতিদিন দিনেরবেলায় মাটি কাটা হচ্ছে। কেউ কিছু বলছেন না। এমনকি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে সড়কে ধুলাবালু আর বৃষ্টি হলে পাকা রাস্তাতেও কাদা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পাংশা উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হাসান বলেন, খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটলে সেতুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য সেতুর কাছাকাছি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি উত্তোলন করা ঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, হাবাসপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু বা মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কৃষিজমি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ। এটি বন্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়। দিনে অভিযান চালালে রাতে মাটি তোলা হয়। সেতু এলাকা থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।