ফুলগাজীতে প্রার্থীকে মারধর, বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ

ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে বহিরাগতদের ধাওয়া করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে
প্রথম আলো

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থেকে জাসদের (ইনু-শিরিন) চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কারণে উপজেলার আমজাদহাট ইউপির জাসদের প্রার্থী দুপুরেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে ৫ জন নৌকার সমর্থককে আটক করা হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর, মুন্সিরহাট ও আনন্দপুর ইউপিতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। ওই ৩টি ইউপিতে শুধু সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অপর তিন ইউপি আমজাদহাট, দরবারপুর ও জিএম হাটে জাসদ (ইনু-শিরিন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন।

ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈন উদ্দিন ইউপি নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ৫ যুবককে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে তাঁর দাবি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে আমজাদহাট ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনের সড়কে গন্ডগোল হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল হাসেমকে (ঘোড়া প্রতীক) মারধর করেন নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা। তিনি পরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, শুধু মারধর নয়, তাঁর মুঠোফোন ও টাকাপয়সাও হামলাকারীরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ভোটকেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা সমর্থক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সেখানে ছুটে গেলে আবুল হাসেম তাদের কাছে অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে ৫ জন নৌকার সমর্থককে আটক করা হয়েছে। তিন ইউপিতেই জাসদ (ইনু-শিরিন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন।

ওই ইউপির জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থী মো. সুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, বহিরাগতরা ইউনিয়নের মনিপুর, দক্ষিণ তালবাড়ীয়া, বসন্তপুর, খাজুরিয়া ও দক্ষিণ তারাকুচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি ভোটকেন্দ্রে তাঁর এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন। তিনি দুপুরেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এবং ওই পাঁচ কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ও পুনর্নির্বাচন দাবি করেন।
জানতে চাইলে মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, কেন্দ্রের ভেতর কিছুই হয়নি। বাইরে কিছু হলে সেটা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।

ওই ইউপির আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মীর হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো বহিরাগত সন্ত্রাসী নেই। কেন্দ্রে ভোটাররাই গিয়েছেন, বহিরাগত কেউ যায়নি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনেই তাঁরা আবোলতাবোল কথা বলছেন।’

ফুলগাজীর মুন্সিরহাট ইউনিয়নের আজমীরি বেগম বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন
প্রথম আলো

উপজেলার দরবারপুর ইউপির জাসদের মশাল প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দুলাল বৈদ্য অভিযোগ করেন, তাঁর এজেন্টদেরও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভোটের আগের রাত থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোর আশপাশের বাড়িতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। বহিরাগতরা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছে।

তবে ইউপির নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হচ্ছে। বহিরাগত দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

উপজেলার জিএম হাট ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আ স ম শাহ আলম বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলোতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। তারা সুষ্ঠু ভোটের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের ভোটারদের ভোট দিতে বাধার সৃষ্টি করছে।

ওই ইউপির নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন। বহিরাগত দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ সত্য নয়।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছেন।