অন্যান্য দিনের মতো আজ রোববারও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে চলাচলরত প্রতিটি ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। এই নৌপথে স্রোতের কারণে ফেরি কম চলায় যাত্রীদের ফেরি পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ফলে যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
এদিকে ফেরিতে ঢাকাগামী যাত্রীদের মধ্যে করোনা সচেতনতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো প্রবণতা নেই। তাঁরা অনেকটা ভিড় ঠেলে দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই এই নৌপথে যাতায়াত করছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার সূত্র জানায়, গতকাল শনিবারের মতো আজ রোববারও বৈরী আবহাওয়া থাকায় সকাল থেকেই ঘাট এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যেই ঘাটে ভিড় করেন মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে তিন চাকার ছোট ছোট যানবাহনে করে যাত্রীরা ঘাট এলাকায় প্রবেশ করছেন। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তাঁরা ফেরিতে পদ্মা পার হচ্ছে। চলমান বিধিনিষেধে ফেরিতে জরুরি যানবাহন লোড নেওয়ার জন্য ১০টি ফেরি সচল রয়েছে। পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের ফেরি পারাপারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ভজন সাহা বলেন, ‘পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরিগুলো বাংলাবাজার ঘাটে আসতে বেশ সমস্যায় পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের খুবই সতর্কতার সঙ্গে ফেরিগুলো চালানোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। এসব কারণে ফেরিগুলো যথারীতি সময়মতো ঘাটে আসতে পারছে না। ঘাটে ভিড়তে তাদের কিছুটা সময় বেশি লাগছে। তবে ঘাটে অপেক্ষমাণ তেমন গাড়ি নেই। যা আছে, এর মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে আসা গাড়িগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে পার করা হচ্ছে। কিছু পণ্যবাহী ট্রাক আটকা আছে। সেগুলো পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ধীরে ধীরে পার করা হবে।’
বরিশাল থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী রোমান খান বলেন, ‘ঘাটে আসার পরই বৃষ্টি। আধা ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করে ভিড় ঠেলে ফেরিতে উঠতে পারছি। পরে ফেরি ছাড়ার পর আবারও বৃষ্টির মধ্যে পড়তে হয়। ফেরিতে পুরো এক ঘণ্টা ভিজে ছিলাম। এই পথে এমন দুর্ভোগে আমি এর আগে কখনো পড়িনি।’
মাদারীপুর থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী সত্তার ব্যাপারী বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধ, তাই ফেরিতে ভিড় হবে; এটা মেনেই ঢাকায় যাচ্ছি। কিন্তু যাত্রাপথে তিন থেকে চার গুণ ভাড়া লাগবে, তা জানা ছিল। মাদারীপুর শহর থেকে ঘাট পর্যন্ত আসতে ১০০ টাকার ভাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৪০০ টাকা করে নিয়েছে। এ যেন ভাড়া রেট করা। মাহিন্দ্র, অটোরিকশা সবার এক রেট। সবাই বিধিনিষেধের সিন্ডিকেটে খুশিমতো ভাড়া নিচ্ছেন। এসব দেখার কি কেউ নেই?’
ঘাটে আটকা পড়া প্রাইভেট কারের চালক কামরুল হাসান বলেন, ‘বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছি। বৃষ্টি, স্রোত এসবের মধ্যেও ফেরি কমবেশি চলাচল করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কারণে আমরা ফেরিতে জায়গা পাচ্ছি না।’
জানতে চাইলে বাংলাবাজার ঘাটের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটে সকালের দিকে ভিড় না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ যাত্রী ও ছোট গাড়ির ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে ভিড়টা বেশি হয়। যাত্রীদের কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না। আমরা তাঁদের আটকালে তাঁরা জরুরি কাজের নানা অজুহাত দিতে শুরু করেন। এভাবে মানুষ ধরে রাখা যাচ্ছে না।’