ফেরিস্বল্পতা ও দুটি ঘাট বন্ধ থাকায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত

বুধবার ভোর থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা লাইনে শত শত গাড়ি ফেরির জন্য আটকে আছে। বুধবার দুপুরে গোয়ালন্দের ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

প্রয়োজনের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে ফেরি কম থাকায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ বুধবার ভোর থেকে দৌলতদিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ৭ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা লাইনে শত শত গাড়ি আটকে আছে। এ ছাড়া এক মাসের বেশি সময় ধরে ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২১টি ফেরি চলাচল করত। ১২টি রো রো (বড়), ৭টি ইউটিলিটি (ছোট) এবং ২টি কে-টাইপ (মাঝারি) আকারের ফেরি ছিল। এর মধ্যে গত বছর ২৭ অক্টোবর আমানত শাহ নামক একটি রো রো ফেরি পাটুরিয়া ঘাটের কাছে কাত হয়ে ডুবে যায়। এরপর এই নৌপথ থেকে কয়েক দফায় আরও চারটি বড় ফেরি মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। ফলে বড় ফেরির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। ১২টির মধ্যে ৫টি বড় ফেরি কমে যাওয়ায় ৭টির সঙ্গে অন্যান্য ফেরি মিলে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হয়। মাঝেমধ্যে এক-দুটি করে ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে পড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দৌলতদিয়ার বড় দুটি ঘাটের মধ্যে ব্যস্ততম ৭ নম্বর ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় সংযোগ সড়ক থেকে পন্টুন অনেক খাড়া হয়ে পড়ায় ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হয়। ফলে আজ ভোর থেকে কর্তৃপক্ষ ঘাটটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

বুধবার সকালে দৌলতদিয়ায় দেখা যায়, ৭ নম্বর ঘাটের রো রো পন্টুনটি পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়কটি কেটে প্রায় দেড়-দুই ফুট করে আরও নিচু করে সংস্কারকাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। পাশাপাশি ঘাটের মাথায় পন্টুনটি বসাতে সেখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ঘাটটি তৈরি করা হচ্ছে।

দৌলতদিয়ার বড় দুটি ঘাটের মধ্যে ব্যস্ততম ৭ নম্বর ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় সংযোগ সড়ক থেকে পন্টুন অনেক খাড়া হয়ে পড়ায় ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হয়। ফলে আজ ভোর থেকে কর্তৃপক্ষ ঘাটটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএর) আরিচা কার্যালয়ের কারিগরি কর্মকর্তা পাপ্পু কর্মকার বলেন, পন্টুন থেকে সংযোগ সড়ক খাড়া হওয়ায় ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে আজ ভোর থেকে ঘাট বন্ধ রেখে সংযোগ সড়ক কেটে অন্তত দেড়-দুই ফুট করে নিচু করা হচ্ছে। এতে পন্টুনের সঙ্গে অনেকটা সামঞ্জস্য থাকবে। এই কাজ শেষ হতে আজ সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। সন্ধ্যা নাগাদ কাজ শেষ হলে রাতের মধ্যেই ঘাটটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বুধবার ভোর থেকে ৭ নম্বর ঘাটটি বন্ধ রেখে মেরামত কাজ করা হচ্ছে। পাশেই সরিয়ে রাখা হয়েছে রো রো ফেরির পন্টুন। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাটের মধ্যে ৬ নম্বর ঘাট বাদে বাকি তিনটি ঘাট চালু রয়েছে। ৬ নম্বর ঘাটের সামনে পানি কম থাকায় এক মাসের বেশি ধরে ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। বাকি মাত্র তিনটি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার দ্রুত করতে না পারায় দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকামুখী শত শত যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। দুই দিন আগে আসা সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি এখনো ফেরির নাগাল পায়নি। ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সাধারণ পণ্যের গাড়ি টার্মিনালে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
ঝিনাইদহ থেকে আসা ধানবোঝাই ট্রাকের চালক জামাল হোসেন বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে গভীর রাতে রাজবাড়ী সদরের গোয়ালন্দ মোড় পৌঁছান। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ঘাটের চাপ কমাতে তাঁদের আটকে দেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের ঘাটের দিকে ছেড়ে দেন। প্রায় ২৬ ঘণ্টা ধরে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সড়কে আটকে আছেন।

ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফেরিসংকটের পাশাপাশি সকাল ৬টার আগে থেকে ৭ নম্বর বড় ফেরিঘাটটি বন্ধ থাকায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে মহাসড়কে থাকা সাধারণ পণ্যের গাড়িগুলোকে আমরা টার্মিনালে ঢুকিয়ে দিচ্ছি। পরে পর্যায়ক্রমে ফেরিঘাট সড়ক ফাঁকা হলে ২০টি করে সাধারণ পণ্যের গাড়ি ছেড়ে দেব।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, ৫টি ফেরিঘাটের মধ্যে এক মাস ধরে ৬ নম্বর ঘাটটি বন্ধ। এর মাঝে আজ ভোর থেকে ৭ নম্বর ঘাটটিও বন্ধ করা হয়েছে। বাকি মাত্র ৩টি ঘাট চালু রয়েছে। ১৬টি ফেরির মধ্যে গতকাল সকালে যান্ত্রিক ত্রুটিতে রো রো ফেরি শাহ মখদুম বিকল হয়ে পড়ে। ১৫টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করায় উভয় ঘাটে গাড়ির চাপ রয়েছে।